ঢাকা, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নাজমুন লিনার গল্প ‘দর্শন’

নাজমুন লিনার গল্প ‘দর্শন’

দুপুর ৩ টার মতো বাজে। জোহরের নামায আদায় করে ফাতেমা অপেক্ষা করছে স্বামী সন্তানের জন্য। ক'দিন থেকেই লাগাতার বৃষ্টি। কখনও মুষলধারায়, কখনো ঝিরিঝিরি। তাই হয়তো ছেলে আয়ানকে স্কুল থেকে নিয়ে বাড়ী ফিরতে বাবা আদনান হোসেনের দেরি হচ্ছে। বাইকে আসতে ঠিক ভিজে একাকার হবে বাবা-ছেলে!

বর্ষায় সবসময় রেইনকোট সাথেই রাখে আদনান। আয়ানের ব্যাগে ছোট থ্রিফোল্ড ছাতা আর একটা ছোট তোয়ালে দেয়া আছে। বিছানায় গা এলিয়ে এসবই ভাবতে থাকে ফাতেমা। তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। একসময় হঠাৎ দরজায় এলোপাতাড়ি ধাক্কার শব্দ। চোখ মেলেই ঘাবড়ে যায় ফাতেমা। হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। আওয়াজ কোথা থেকে আসছে এটা বুঝতে বিছানা থেকে নেমে ঘর থেকে বারান্দায় বেরিয়ে আসে। ওই সময় হন্তদন্ত হয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া আয়ান সিঁড়ি বেয়ে উপরে আসে। ওর চেহারায় উদ্বিগ্নতার ছাপ। বৃষ্টিতে কাকভেজা শরীর।

নিচ তলায় কিসের শব্দ হচ্ছে আয়ান?
আয়ান বিরক্ত হয়ে বলে, মা, নিচে গিয়ে দেখো বাবা কি করেছে!

আদনান হোসেন। বয়স ৪৭। চলনে খুব ধীর স্থির কিন্তু মেজাজে সাংঘাতিক জাদরেল। পান থেকে চুন খসলেই আর রক্ষা নেই। তুলকালাম বাধিয়ে দেন। রেগে যান চট করে মিলিটারীর মতো। রেগে গেলে তিনি আর মানুষ থাকেন না। ১৭ বছরের সংসার জীবনে এটা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছেন ফাতেমা। তিন তলার সিঁড়ি বেয়ে ফাতেমা নিঃশব্দে নিচ তলায় নেমে আসে। দরজায় ধাক্কার শব্দটা সিঁড়ির কাছের কমন বাথরুম থেকে আসছে। এবার এই শব্দের সাথে কানে এলো একটা আকুতি মেশানো ভয়ার্ত কণ্ঠস্বর।

-ভাই, দরজাটা খোলেন। ভীষণ বিপদে পড়ে যাব আমি।
সাহস করে ফারজানা আদনানকে জিজ্ঞেস করল, কে ইনি? দরজায় তালা দিয়ে ওনাকে আটকে রেখেছো কেন?
আদনান ঝাঁঝালো কণ্ঠে ফাতেমা কে বলল, তোমাকে এত জানতে হবে না। যাও উপরে যাও জলদি। খবরদার, আমার অনুমতি ছাড়া কেউ এই তালা খুলেছো তো বুঝবে তোমার একদিন কি আমার একদিন।

কথা না বাড়িয়ে ফাতেমা চুপচাপ তিন তলায় চলে আসে।

তিন তলায় এসে ফাতেমা পাংশু মুখে আদনান, আয়ানের বৃষ্টিতে ভেজা কাপর বারান্দার দড়িতে মেলে দেয়। ততক্ষণে আয়ান শাওয়ার নিয়েছে। আদনান শাওয়ার নিতে বাথরুমে ঢুকতেই ফাতেমা আয়ানের কাছে জানতে চায়, ঘটনা কি?

আয়ান কণ্ঠস্বর নীচু করে বলতে থাকে...

স্কুল থেকে ফেরার সময় হঠাৎ খুব জোরে বৃষ্টি আসে। আমি আর বাবা যে যার রেইনকোট পরে বাইকে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিই। বাবা বেশ তাড়াহুড়ো করেই বাইক চালাচ্ছিল। সারা রাস্তায় তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। বাড়ীর কাছে মোড়টায় ড্রেনের কাজ চলছে। রাস্তায় পানি কাদায় ভর্তি। জ্যাম হয়েছিল সে কারণেই। বাবা ভীড়ের মধ্যে দিয়ে কায়দা করে আসতেই একটা ইজিবাইকের সাথে বেশ জোরেই ধাক্কা লাগে। বাইকের সামনের চাকার উপরের অংশ ভেঙে যায়। বাবা মোটর বাইক রাস্তার সাইডে রেখে ইজিবাইকের ড্রাইভারকে ইজিবাইক থেকে নামিয়ে ওখানেই এলোপাতাড়ি মারতে থাকে, এক পর্যায়ে ওই ড্রাইভারের কাছে বাইকের ক্ষতিপূরণ চায়। ড্রাইভার যখন বলে ওঠে, ভাই দোষ তো আপনার, আমি কেন ক্ষতিপূরণ দিব? তখন বাবা তাকে আবারও মারতে থাকে। লোকটা রাস্তার কাদায় পড়ে যায়। হাত আর কপাল কেটে যায়। বাবা লোকটাকে কলার ধরে আমাদের বাইকে ওঠায়। দু একজন লোক বাবাকে বলেছে, ভাই ছেড়ে দেন,গরীব মানুষ। বাবা তাদের উপর ক্ষেপে যায়। বলতে থাকে ক্ষতিপূরণ না দিলে তাকে যেতে দেবে না। কারও অনুরোধে বাবা কান দিল না। লোক টাকে বাসা এনে বাথরুমে বন্ধ করে রাখলো। লোকটার মোবাইল টাও কেড়ে নিয়েছে।

মা, লোকটা হিন্দু। বাবাকে বার বার বলছিল, কাল থেকে তাদের পূজা। আজ ভাড়ার ইজিবাইক জমা দিয়ে সে জমানো টাকায় বউ বাচ্চাদের নিয়ে বাজার যাবে। সবার জন্য কেনাকাটা করবে।

কথাগুলো শুনে ফাতেমা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লো। চুপ করে কি বাথরুমের দরজা খুলে লোকটাকে যেতে বলবে! কিন্তু সদর দরজায়ও তালা দেয়া। ওটা খুলতে গেলেই কেমন ঘড়ঘড় ঘড়ঘড় বিকট শব্দ করে। আদনান ইচ্ছে করেই ওটা ঠিক করে না, যেন কেউ বাসায় ঢুকলে প্রচন্ড শব্দেই বোঝা যায়। আদনান যখন বুঝতে পারবে ফাতেমা দরজা খুলে লোকটাকে যেতে দিয়েছে তখন ফাতেমার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাবে। রীতিমত টর্নেডো। একটা মাইরও ফাতেমার শরীর ছাড়া কোথায় পড়বে না, সেই সাথে অকথ্য ভাষায় গালাগালি। তাই আপাতত চুপচাপ থাকে ফাতেমা।

আদনান, আয়ান খেয়ে বিছানায় গেল বিশ্রাম নিতে। তবে বিছানায় যাবার আগে আবারও সাবধান করল ফাতেমাকে। খবরদার বেশি দয়া দেখাবা না। দরজা খুলবা না।

একটু খেতে দেই? ফাতেমা এই কথা বলতেই আদনান বলে ওঠে,

ওই বেটা বদের হাড্ডি। ওরে কিচ্ছু দিবা না। তাইলে তোমাকেও ওর সাথে বন্ধ করে রাখব।

একটু পর পর দরজায় ধাক্কা পড়তে থাকে। করুণ আর্তনাদে বাড়ীর চারপাশ ভারী হয়ে পড়ে। ভাই, দরজাটা খুলেন। আমার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। ইজিবাইকটা হারিয়ে যাবে।

আদনান গভীর ঘুমে যখন নাক ডাকতে থাকে, ফাতেমা একটা প্লেটে ভাত, মাছ, সবজি সাজিয়ে নিঃশব্দে নিচতলায় নেমে আসে। দিনের বেলায়ও অন্ধকার নেমে আসছে। খুব জোরে বিজলী চমকানোর আওয়াজে গা শিউরে উঠছে ফাতেমার। আদনান এতোটা অমানবিক, লাইটটাও জ্বালাতে দেয়নি। লাইটের সুইচটা বাইরে, অন করতেই ভেতর থেকে আওয়াজ আসলো, দয়া করে খুলে দেন।

ফাতেমা নিচু স্বরে বলল, ভাই চুপ করেন। কথা বলবেন না। আমি দরজা খুলে দিচ্ছি।

দরজা খুলে ফাতেমা যা দেখলো, তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। লোকটার বয়স ৩২-৩৫ হবে। কাদায় সারা শরীর মাখামাখি। সেই কাদা ছাপিয়ে রক্ত দেখা যাচ্ছে কপালে, হাঁটুতে হাতের কুনুইয়ে। বাম চোখের নিচে রক্ত জমে কালশী পড়েছে। শার্ট ছিঁড়ে কাঁধের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। লোকটা খুব কষ্টে উঠে দাড়ালো।

ঝুঁকে ফাতেমার পা ধরতে ধরে বলল, দিদি আমাকে যেতে দিন, আমার ইজিবাইকটার কি অবস্থা আমি জানি না। আমার বাড়ীতে সবাই অপেক্ষা করছে। কাল পূজা। আমি কথা দিয়েছি ওদের বাজারে নিয়ে যাব। নতুন কাপড় কিনে দেবী দর্শনে যাব। মায়ের আশির্বাদ নিব। আমি ফোনে ওদের জানাতে পারিনি আমার এই অবস্থা। ইজিবাইক চালিয়ে এই কয়দিন কিছু টাকা জমিয়েছি ওদের জন্য। ভাই আমার কাছে ক্ষতিপূরণ চায়। আপনি বলুন দিদি, আমি কি এই টাকা দিতে পারি? এই টাকা ভাইকে দিলে আমি কি করে ওদের সামনে দাঁড়াব?

ফাতেমা লোকটিকে বলে, আপনি শান্ত হোন। এই খাবারটুকু খেয়ে নিন। আমি দেখছি কি করা যায়।
-দিদি, আমি কিচ্ছু খাব না, আপনি গেটটা শুধু খুলে দিন। আমি চলে যাই।

অনেক জোরাজুরি করেও লোকটাকে কিছু খাওয়ানো গেল না। লোকটাকে যেতে দেবার মত সাহস ফাতেমার নেই। লোকটাকে আশ্বাস দিয়ে আবার বাথরুমে তালা দিল। উপর তলায় এসে আছরের নামায আদায় করল। দোয়া দরুদ পাঠ করল এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।

আদনান ঘুম থেকে উঠে নামায আদায় করে ফাতেমা কে বলল,মোটরবাইক ঠিক করতে যাচ্ছি। ফিরে এসে ওই বেটার কাছ থেকে রিপিয়ারিং চার্জ নেব। ওর কাছে না থাকলে ওর বৌকে কল দিব। টাকা না দেয়া পর্যন্ত ওর রক্ষা নাই।

ফাতেমা ভয়ে ভয়ে জবাব দেয়, বাদ দাও না, গরীব মানুষ।
-তুমি ওর হয়ে সাফাই দিচ্ছো কেন! তোমার কি লাগে ওই বেটা?
ফাতেমা তবু অনুনয় করে বলে, যেতে দাও লোকটাকে। আর ক্ষতিপূরণই যদি নেবে তবে উনাকে এভাবে মারলে কেন?

ফাতেমার এই কথাতে আদনান রক্ষচক্ষু দৃষ্টিতে তাকায়। ফাতেমা ভয়ে কুকড়ে যায়। আদনান চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ঝুমঝুম বৃষ্টিতেই।

আয়ানসহ ফাতেমা আবার নিচতলায় নেমে আসে। কোনো আওয়াজ নেই বাথরুমের ভেতরে। এই বাথরুমটা পরিবারের সদস্য এখন কম হওয়ার কারণে পরিত্যাক্তই বলা চলে। বাড়ীর কিছু কাজ চলছিল তাই এই বাথরুমে রড, সিমেন্ট, রাজমিস্ত্রিদের যন্ত্রপাতি রাখা হয়েছে।

বৃষ্টির কারণে চারিদিকে অন্ধকার হয়ে আছে। এর মাঝে লোকটা অন্ধকারে কি করে আছে! ফাতেমা দুশ্চিতায় পড়লো। আয়ান বলল, মা লোকটা অজ্ঞান হয়ে যায়নি তো?

বাথরুমের লাইটের সুইচটা দিতেই লোকটার কণ্ঠ শুনতে পেল ওরা। লোকটা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
দিদি, আমার কাছে ২৭১০ টাকা আছে, ভাইকে দিয়ে দিব। আমাকে ছেড়ে দিন। দরজাটা খুলে দিন।

-আপনি একটু ধৈর্য্য ধরুন।

আয়ানের দিকে তাকিয়ে ফাতেমা বলে, কি করব? তালা ভেঙে উনাকে বের করব?
আয়ান জবাব দেয়,তোমার মাথা ঠিক আছে? বাবা এসে তোমাকে আস্ত রাখবে তাহলে! চলো তো উপরে। এখানে থাকলে তোমার আরও বেশি খারাপ লাগবে। আয়ান ফাতেমাকে নিয়ে তিনতলায় চলে আসে।

মোটরবাইকের হর্ন শুনে কান খাড়া করল ফাতেমা। আয়ান যা, গেট খুলে দে তো। তোর বাবা এসেছে। আয়ান গেট খুলতে যায়। ফাতেমা উপর থেকে আদনানের বাজখাই গলা শুনতে পায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে। ফাতেমা অস্থির হয়ে পায়চারি করতে থাকে। ঝড়ো বৃষ্টির ছিটে আসা পানিতে ফাতেমার শরীর ভিজতে থাকে। তাতে কোনো ভাবান্তর নেই।

মিনিট পনের পর আয়ান দৌড়ে উপরে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, মা, বাবা তোমাকে নিচে ডাকছে।
ফাতেমা নিচে গিয়ে দেখলো, লোকটি গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আদনানের বাইকের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওটা ঠিক করা হয়েছে। লোকটাকে উদ্দেশ্য করে আদনান বলল, কানে ধর। কোনদিন যেন তোকে এই এলাকাতে না দেখি। লোকটার মোবাইলটা ফিরিয়ে দিয়ে বলল, যা এখন। কাউকে যদি কমপ্লেইন করিস, অটো বাইক ইউনিয়নে তোর খবর করে ছাড়বো।

লোকটা খোঁড়াতে খোঁড়াতে রাস্তার দিকে হাঁটা শুরু করলে আদনানও তার কর্মস্থলের দিকে রওনা হলো।
ফাতেমা খেয়াল করলো লোকটাকে। খুব ধীর পায়ে হেঁটে বামের রাস্তায় গেল, আদনান গেল ডান দিকে।

নিজেকে চরম অপরাধী মনে হচ্ছে। ভীষণ রাগ হচ্ছে নিজের উপর। অদ্ভুত এক মানুষের সাথে নিয়তি বেঁধেছে তাকে। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। কি এক অভিশপ্ত জীবন যাপন। এসব ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠল ফাতেমা।

-আয়ান জানিস, তোর বাবা যে শুধু শুধু লোকটাকে ছেড়ে দিল! হয়তো কম টাকা লেগেছে বাইক রিপেয়ার করতে।
-তুমি কচু জানো। বাবা কি সেই মানুষ!! গুনে গুনে ২৫০০ টাকা নিয়েছে ।লোকটা কত অনুরোধ করল,কাঁদলো। বাবা কিছুতেই তার কোনো কথা শুনলো না। মা জানো, লোকটার কত জায়গায় কেটেছে, ঠিক মতো দাঁড়াতেও পারছে না।

ফাতেমা সাথে সাথে কিছু একটা ভাবলো, আয়ানকে বলল, দৌড়ে যা । লোকটা নিশ্চয়ই ইজিবাইকটা যেখানে রেখেছিল ওখানে গিয়েছে। লোকটাকে ডেকে আন বাবা।

-আরে কি বলো? বাবা জানতে পারলে শেষ করে দিবে আমাদেরকে। ওই লোকটার সাথে আমাদেরকেও শাস্তি দিবে।

-তোর বাবা বুঝতেই পারবে না। তুই যা। নইলে লোকটার নাগাল পাবি না।

ছাতা মাথায় দিয়ে দৌঁড় দেয় আয়ান।

ফাতেমা দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে নিচ তলায় নেমে আসে। প্রার্থনা করে, লোকটাকে যেন আয়ান খুঁজে পায়। বাড়ীর সদর দরজার দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল আয়ান একাই ঢুকছে। হায় আল্লাহ, এখন কি হবে? লোকটা কত কষ্ট নিয়ে এ বাড়ী থেকে গেল। কত অভিশাপ দিচ্ছে হয়তো আদনানকে। কত বড় অন্যায় দেখেও ফাতেমা চুপ ছিল। এই অভিশাপের দায় ফাতেমারও। লোকটা স্ত্রী, সন্তানকে খুশি করতে পারবে না আজও। এর ফিরতি দুর্ভোগ নিশ্চয়ই আদনানের পরিবার ভোগ করবে! কথায় আছে, দুনিয়ার ধার দুনিয়াতে শোধ হয়।

উথাল পাথাল ভাবনার মাঝেই দেখলো, একটা ইজিবাইক থামলো। লোকটার বিমর্ষ চেহারা ভিজে জবজবা।
-দিদি,আমাকে কেন ডেকেছেন? আমার কাছে সামান্য কয়টা টাকা ছাড়া আর কিছু নাই। এটুকুও নিয়ে নেবেন?
-ছি ভাই। কি যে বলেন! আপনি আমাদের ক্ষমা করুন। আপনি এই টাকাটা রাখুন। তিন হাজার টাকা আছে, ২৫০০ আপনার টাকা, আর বাকি ৫০০ আপনি ঔষধ খাবেন।
লোকটা কাঁপা কাঁপা হাতে টাকাটা নিল।

লোকটার চোখ খুশিতে চকচক করে উঠল। দিদি, আপনি আমার বৌ ছেলের কাছে সম্মানটা আজ রাখলেন। কত দিনের শখ ওরা নতুন পোশাক পরে মা দূর্গার দর্শনে যাবে। আমি পরিনি নিতে। বৌ তাই রাগ করে বিয়ের পর মন্ডপেই যায়নি কখনও। এবার ওদের মনের আশা পূরণ হবে। আমি আমার ইজিবাইকটাও ফিরে পেয়েছি। আমার জন্য আশীর্বাদ করবেন।

-নিশ্চয়ই। আমি আপনার কাছে আবারও ক্ষমা চাচ্ছি হাতজোড় করে। আপনি মনে রাগ রাখবেন না। দয়া করে অভিশাপ দেবেন না ওর উপর রাগ করে।

-না দিদি ,কখনোই না। রাগ, দুঃখ যা ছিল সব তো আপনি মুছে দিলেন।
-ভাই আপনি তাড়াতাড়ি চলে যান। যেকোনো মুহূর্তে ও চলে আসবে। তাহলে কি হবে বুঝতে পারছেন তো? আপনি জলদি যান। মাগরিবের আযান হচ্ছে। বাড়ীতে সবাই অপেক্ষা করছে। ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ খাবেন।

লোকটা খোঁড়াতে খোঁড়াতে মাথা নিচু করে গেটের দিকে এগিয়ে গেল প্রচন্ড বৃষ্টির মাঝেই। হঠাৎ খুব কাছেই কোথাও বাজ পড়ল , লোকটা মাথা ঘুরিয়ে ফাতেমাকে দেখলো, কি মায়াবী মুখ! বিজলীর আলোয় ফাতেমাকে মা দূর্গার মতো লাগছে।

এএইচ/এমএস