ঢাকা, শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ | ৫ মাঘ ১৪৩১ | ১৭ রজব ১৪৪৬

তাহমিনা বেগমের গল্প ‘নাসু বিবির বকরি ঈদ’

তাহমিনা বেগমের গল্প ‘নাসু বিবির বকরি ঈদ’

ফাইল-ছবি

নাসু বিবি ভাবছে। সামনে বকরী ঈদ। সে বিছানায় পড়ে আছে। দুই দুইখান মেয়ে নিয়ে বড় কষ্ট সৃষ্টে দিনাতিপাত করে। আগে বাসাবাড়িতে গতর খাটিয়ে বাসি, পান্তা যা পেতো আর মাস শেষে কিছু নগদ। সব মিলে কোনো মতে দিন কাটাতো। ওর মরদ থেকেও নাই। প্রথম বাচ্চা হবার পর থেকেই ওর সাথে বনিবনা হচ্ছিল না। ওর ঘরের মানুষ মেয়ে পয়দা করেছে কেন? এই ইস্যু নিয়ে ঝগড়াঝাটি করে আরেক মহিলার সাথে সম্পর্ক করে।

রিকশা চালিয়ে পায়, নাসু বিবিরে একটা ফুটো পয়সাও দেয় না। উল্টা বস্তির টং ঘরের ভাড়া, সংসারের খোরপোষ ওর ওপরে। তার ওপর বাসাবাড়িতে কাজ করে যে কটি টাকা পেতো, তাও ওর স্বামী কেড়ে নিত। কী যে কষ্টে নাসু বিবির দিন কাটে! কোনোরকমে একবেলা-আধপেটা খেয়ে দিন চালাতো। বুকের দুধ না পেয়ে বাচ্চাটা চিঁ চিঁ শব্দে কান্না করতো। তাও হাসুবিবি দাঁতে দাঁত কামড়িয়ে পড়ে থাকে স্বামীর ঘরে।

যাবেই বা কোথায়? বাচ্চার বয়স ছ'মাস না পেরুতেই টের পেলো আবারও সে পোয়াতি। চোখে ধাঁধা দেখতে থাকে সে। একমুখে সে দুধ দিতে পারে না আবার আরেকটা? এতোই দুর্বল হয়ে পড়লো যে বাসাবাড়ীর কাজ করাও বন্ধ হয়ে গেল। কেউ ওকে কাজে নেয় না। এদিকে স্বামীও ঐ মহিলাকে বিয়ে করে চলে গেছে। বস্তির ভাড়া বাকী, তার ওপর খাওয়া পরা। বস্তির মালিক ভাড়া দিতে না পারায় একদিন ওকে বের করে দেয়।

কি করবে বুঝতে পারে না নাসু বিবি। শেষে রাস্তাই হয় ওর আশ্রয়। কোনোরকমে দুইটা পলিথিন দিয়ে ইটের টুকরো চাপা দিয়া রাতে ঘুমায়। এর মধ্যে পুলিশি হাঙ্গামা, চিল,শকুনের নজর তো লেগেই আছে। দেখতে দেখতে সময় ঘনায়। রাস্তাতেই জন্ম দেয় আরেক মেয়ে। হায় রে কপাল! নিজে মেয়ে হয়ে জন্মে সমাজ এবং নিজেই নিজের বোঝা। তার ওপর দুই মেয়ে সন্তান নিয়ে কি করবে ভেবে পায় না। রাস্তায় বসে মানুষের কাছে হাত পেতে কিছু পেলে খায় না হয় উপোষ।

এরই মধ্যে দেখতে দেখতে ছোট মেয়ের বয়স বছরের কাছাকাছি। বড়টা তো আছেই। সেও তো ছোট।
সারাদেশে শুরু হয়েছে জ্বর। নাম নাকি ডেঙ্গু জ্বর। গত তিনদিন ধরে রাস্তায় পড়ে আছে। জ্বরে প্রায় জ্ঞান হারানোর অবস্থা। বাচ্চা দুইটা নিয়ে কি করে যে দিন কাটছে, একমাত্র ওপরওয়ালা ছাড়া কেউ জানে না। রাস্তায় শুয়েই হাত পাতে লোকজনের কাছে। কারো দয়া হলে দু,চার টাকা দেয়। এভাবে কি চলে?

ভাবছে, বকরি ঈদ আসছে সামনে। এ বাড়ি ও বাড়ি চেয়ে কিছু গোশত যোগাড় করবে। কিছু আয়-রোজগার হবে। কিন্তু নাসু বিবি জানে না, তার জ্বর কখন ভালো হবে?

সে দূরের আকাশপানে তাকিয়ে আল্লাহকে ডাকে খাস দিলে। জানে না, তার ভাগ্যে সামনে কী লেখা আছে।

তাহমিনা বেগম