ঢাকা, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লকডাউনে নাকাল পাহাড়ি জনপদ

লকডাউনে নাকাল পাহাড়ি জনপদ

ছবি: সংগৃহীত

মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম: দফায় দফায় লকডাউনে দেশের সাধারণ নাগরিকদের জীবন নাকাল। সমাজের উপর মহল সরকারি বিভিন্ন অনুদান পেলেও বঞ্চিত রয়ে যায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠিসহ নিম্ন আয়ের মানুষ। এরপরেও দেশের বৃহৎ স্বার্থে নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার প্রয়োজনে চলমান মহামারিতে সরকার লকডাউনের বিকল্প কিছু ভাবতে পারছে না। কারণ, সুপরিকল্পিত ও কার্যকর লকডাউন বিশ্বের বহু দেশেই সুফল বয়ে এনেছে। কিন্তু আমাদের মত রাষ্ট্রে কি তা আদৌ সম্ভব? প্রশ্ন থেকেই যায়।

যাক আমি সে বিষয়ে না গিয়ে বরং তুলে ধরার চেষ্টা করব, আদতে সাধারণ মানুষ লকডাউনে কেমন আছে। ঢাকার বাইরের সাধারণ মানুষ কেমন আছে তা জানার ধারাবাহিকতায় এবার গিয়েছিলাম পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে। সাতসকালে খাগড়াছড়ি শহরে পৌঁছেই বুকের ভিতরটা হাহাকার করে উঠল।

ঈদের পরদিন। পার্বত্য জেলা ট্রাভেলারদের পদচারণায় থাকবে মুখর। অথচ শহরের প্রাণকেন্দ্র শাপলা চত্ত্বরসহ সর্বত্র সুনশান। আবাসিক হোটেলগুলো পুরোই ফাঁকা। পর্যটক নির্ভর ব্যবসায়ীদের বুকের ভিতর চাপা কান্না। নাম না প্রকাশের শর্তে কেউ কেউ বললেন, অপরিকল্পিত লকডাউনে করোনা প্রতিরোধের সুফল পাবার চেয়ে উল্টোটাই বেশি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। সাধারণ ব্যবসায়িরা পুঁজি হারিয়ে ফতুর। পর্যটনের উপর নির্ভরশীল ব্যবসায়ীরা সাধারণত সারা বছরের লাভ-লোকসানের ক্ষতি দুই ঈদে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন। সেই জায়গায় বিগত দুই বছর যাবৎ পর্যটন প্রায় বন্ধ যা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিকাশে বিশাল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

শহর ছেড়ে এবার ছুটি পাহাড়ি পাড়ার পথে। পানছড়ি রোডের পেরাছড়া ব্রীক ফিল্ড এলাকায় গিয়ে দেখা হয় স্থানীয় পাড়ার বাসিন্দা জগত জ্যোতি ত্রিপুরার সঙ্গে। কথা প্রসঙ্গে তিনি লকডাউনের পাশাপাশি তাদের স্থানীয় সমস্যাগুলোও তুলে ধরেন। জগত জ্যোতি জানান, চেঙ্গী নদীর এ পাশটায় যদি একটা বেইলি ব্রীজ করে দেয়া হয় তাহলে পাড়ায় বসবাস করা বাসিন্দাদের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত হতে আসা পর্যটকরাও এর সুফল পাবে। নদী পার হয়ে হাঁটতে হাটঁতে দেখি চেলাছড়া লক্ষী নারায়ণ মন্দির। জ্যোতি ত্রিপুরা অনুরোধ করলেন মন্দিরটির তহবিলে আসা অনুদানের অর্থ সম্পর্কে তুলে ধরতে কিন্তু তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড না থাকায় লেখা সম্ভব হল না।

আমাদের গন্তব্য মায়ুং কপাল পাহাড় পর্যন্ত। পুরোটা পথ হেঁটেই যেতে হবে। হাঁটতে হাঁটতে পথের পাশের এক দোকানে বসি। চা-বিস্কুটের দোকানটি পরিচালনা করে থাকে দীপা নামের এক তরুণী। লকডাউনে তাদের ব্যবসার অবস্থা ভাল না। আমরা ছাড়া বাইরের কোন আগুন্তক নেই। চলমান লকডাউনে পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, দোকানের পেছনেই থাকা বাগান হতে সদ্য পেড়ে আনা রাঙগুই নামের আম বিক্রি করলো কেজি মাত্র ১৫ টাকা দরে। আমের স্বাদ ও ঘ্রাণ বেশ। এ রকমভাবে চলতে চলতে দেখলাম, মুয়ুং কপাল পর্যন্ত দেখা অনেক দোকান ক্রেতার অভাবে বন্ধ। কারণ, এসব দোকানিরা মূলত পর্যটক নির্ভর। এখানকার অধিকাংশ মানুষ নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। তারা এখন পুঁজি হারিয়ে প্রায় সর্বস্বান্ত। এতে করে বাড়ছে দারিদ্র‍্য। পরিস্থিতি নাগালের বাইরে যাবার আগেই প্রয়োজন লকডাউন সর্ম্পকে দূরদর্শী মহা পরিকল্পনা। কেননা, লকডাউন কোন সমাধান নয়। চাই যথোপযুক্ত নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা, দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ।

এএইচ/জেইউ