ফাইল ছবি
বিচারকাজ থেকে সাময়িকভাবে প্রত্যাহারের পর ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতাও হারালেন বিচারক কামরুন্নাহার।
সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ কামরুন্নাহারের ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা ‘সিজ করা হয়েছে’ মর্মে আদেশ দেন।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মুহাম্মদ সাইফুর রহমান গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠান। এতে বলা হয়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে বর্তমানে সংযুক্ত এবং ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর সাবেক বিচারক বেগম মোসা. কামরুন্নাহার আজ সকাল সাড়ে ৯টায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সশরীরে উপস্থিত হন। আপিল বিভাগ কার্যতালিকার ১ নম্বর ক্রমিকের মামলায় শুনানি শেষে তাঁর ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা ‘সিজ করা হয়েছে’ মর্মে আদেশ প্রদান করেন। পূর্ণাঙ্গ রায় পরবর্তী সময়ে প্রকাশ করা হবে।
সোমবার যে মামলায় জামিন নিয়ে কামরুন্নাহারকে তলব করা হয়েছিল, সেটি হচ্ছে ‘রাষ্ট্র বনাম আসলাম সিকদার’ মামলা। এ মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন বাংলার সাবেক অনুষ্ঠান প্রযোজক আসলাম সিকদারের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মামলা করা হয়। ওই দিনই তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কারাগারে পাঠানো হয় পরদিন। ২০১৯ সালের ১৮ জুন হাইকোর্ট তাঁকে জামিন দেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ জুন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত এ জামিন স্থগিত করেন। এর পরও গত বছরের ২ মার্চ আসলামকে জামিন দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক কামরুন্নাহার। এরপর ১২ মার্চ আপিল বিভাগ কামরুন্নাহারকে ওই বছরের ২ এপ্রিল আদালতে হাজির হতে বলেছিলেন। তবে করোনা মহামারির কারণে সেদিন এ বিষয়ে আর শুনানি হয়নি।
গত বছরের ১৪ অক্টোবর বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে আসলাম সিকদার খালাস পান। তখন ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ২০ জানুয়ারি মামলার নথি তলব করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি আসলাম সিকদারকে আত্মসমর্পণেরও নির্দেশ দেয়া হয়।
মামলা সূত্র মতে, ধর্ষণের শিকার মেয়েটি একজন নাট্যশিল্পী। আসলাম সিকদার তাঁকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন এবং আরো বড় নাট্যশিল্পী হিসেবে নিজ হাতে তৈরি করবেন বলে আশ্বাস দেন। বিভিন্নভাবে আশ্বাস দিয়ে আসলাম মেয়েটিকে নাটকের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য তাঁর দিলু রোডের নিজের অফিসে যেতে বলেন। ২০১৮ সালের ২৬ আগস্ট মেয়েটি সেখানে গিয়ে বুঝতে পারেন যে সেটি কোনো প্রশিক্ষণকেন্দ্র নয়। তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে আসলাম তাঁকে বাধা দেন এবং সেখানে আটকে রেখে ধর্ষণ করেন।
মামলার তদন্ত করে ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন হাতিরঝিল থানার পরিদর্শক মো. ইকবাল। ২০১৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিচার শুরু করেন আদালত। গত ১৪ অক্টোবর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫-এর বিচারক সামছুন্নাহার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাসের আদেশ দেন।
স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও গত বছরের ২ মার্চ আসলামকে জামিন দেয়ার ব্যাখ্যা দিতে আপিল বিভাগে হাজির হন দেন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক মোসা. কামরুন্নাহার। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি আপিল বিভাগের এজলাসকক্ষে প্রবেশ করেন। এরপর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে তাঁর বিষয়ে রুদ্ধদ্বার শুনানি শেষে এই আদেশ দেয়া হয়।
এর আগে গত ১১ নভেম্বর রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার রায় ঘোষণার পর পর্যবেক্ষণে বিচারক কামরুন্নাহার ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর মামলা না নিতে পুলিশকে ‘পরামর্শ’ দেন। এ ঘটনায় ১৪ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি তাঁকে বিচারকাজ থেকে সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করেন।