ছবিঃ সংগৃহীত
মোসাম্মৎ সারমিন সুলতানা: আমি নারী, তাই বলে কি আমি আজীবন বন্দি দেশায় জীবন কাটাবো? আমরা কি কোনদিন এই পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্ত হতে পারব না? কবে আসবে সেদিন, যেদিন খোলা আকাশে উন্মুক্ত চুলে নীল শাড়িতে মাথায় বেলি ফুল কানে একগুচ্ছ গোলাপ হাতে এক গোছা লাল রেশমি চুরি পরে মুক্ত বাতাসে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলতে পারবো? আমরা নারী. আমরাও সব পারি। আমরা আজ ঘরের এক কোণে বন্দী হয়ে নেই। আমার ইচ্ছা আমার প্রার্থনা আজ আমার আল্লাহ শুনেছে। এখন আমরা স্বাধীন বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে সমানভাবে কাজ করতে পারছি। ভাবলেই যেন মনটা ভরে যাচ্ছে। মনে পড়ে যাচ্ছে সেই কথা
প্রাচীন কাল থেকে সভ্যতা গড়ে ওঠার পেছনে পুরুষকে সকল কাজের সহায়তা ও প্রেরণা জুগিয়েছে নারী। আজ নারীরা শুধু ঘরের কাজেই সীমাবদ্ধ নেই। কেননা নারীরা আজ সংসার সামলানো ছাড়াও দেশের যেকোনো কাজে পুরুষের সমান দক্ষতায় যে কোন কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পাদন করতে সক্ষম। অনেকে নারীকে, নারীর শিক্ষাকে অবহেলার চোখে দেখে। তারা মনে করে নারীরা দেশের কোন কাজে লাগবে না।। তোমাদের এ ধারণা ভুল। তোমরা কি একটিবার চক্ষু খানা মিলিয়ে দেখনি যে আমরা নারীরাও মুক্তিযুদ্ধের সময় পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রেরণা যুগিয়েছি সাহস দিয়েছি সেবা করেছি মুক্তিযুদ্ধও করেছি। আজ পর্যন্ত বিশ্বের যত অভিযান সংঘটিত হয়েছে তার মূল প্রেরণা শক্তি হলো আমরা নারী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের আসন অলঙ্কৃত করেছে নারী। নারী সমাজের হাতে যেমন পরিবারের চাবি থাকে। তেমনি জাতীয় জীবন গঠনের মূল চাবিকাঠি হিসেবে নারীকে আখ্যায়িত করলে ভুল হবে না।
নারীরা আজ শুধু সংসারের কোণে বন্দী থাকছে না। তারাও ডাক্তার, পাইলট, শিক্ষক, উকিল, জজ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রায় সর্বক্ষেত্রেই পুরুষের পাশে নারী অসামান্য ভূমিকা পালন করে চলছে। একটি নারী তার প্রেরণা দিয়ে শক্তি দিয়ে জাতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নারীরা যেমন তার সংসার কে আগলে রাখে সংসারের ভালো-মন্দ থেকে শুরু করে পুরুষকে অনুপ্রেরণা উৎসাহ দিয়ে থাকে। ঠিক তেমনি বিভিন্ন কাজে সহায়তা করছে নারী। মুক্তিযুদ্ধের সময় নারীরা যদি পুরুষের সাথে কাজ না করতো তবে আমরা স্বাধীনতা বা স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বাঁচতে পারতাম না।
নারীকে শিক্ষা গ্রহণে এবং জাতীয় উন্নয়নের কাজে এগিয়ে আসার পথে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এখন এসব বাঁধা কাটিয়ে উঠে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে পারছে। পুরুষ কখনো একা দেশের উন্নয়নে কাজ করে সফল হতে পারেনা বা পারবে না। আর যতটুকু সফলতা হয় নারীর সহযোগিতা ও প্রেরণাতেই। তাইতো কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন-
কোন কালে একা হয়নি কো জয়ী পুরুষের তরবারি প্রেরণা দিয়েছে শক্তি দিয়েছে বিজয় লক্ষী নারী।
এটার জ্বলন্ত উদাহরণ আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ তিনি একজন মেয়ে হয়েও পুরুষের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে বুঝিয়ে দিয়েছেন নারীরা কোন অংশেই কম নয়।
নারীরা যে চাইলেই সব করতে পারে এটা তিনি প্রত্যেকটা নারী জাতির হয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর জন্য যখন বিদেশে সহায়তা চাওয়া হয় তখন সেখান থেকে না করে দেয়া হয়। তবুও কি থেমে গেছে? না তার অদম্য ইচ্ছা শক্তি তার পরিশ্রমকে সার্থক করেছে। তিনি নিজের অর্থ ব্যয় করে বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দেখিয়ে দিয়েছে বাঙালি জাতি স্বপ্ন দেখাতে জানে প্রয়োজনে সেটা বাস্তবায়ন করে দেখাতেও পারে। তিনি একজন নারী এত বড় কাজ বিশ্বের দরবারে গৌরবের ছাড়া অন্য কিছুই নয়। এই দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ এবং আগামীর প্রত্যেকটা নারীজাতির জন্য নারীর ভূমিকার জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে বেঁচে থাকবেন।
আজ আমরা নারীরা অত্যন্ত স্বগৌরবে বলতে পারি পুরুষে কোন ভেদাভেদ নেই চলো সবাই একসাথে সমাজের দেশের উন্নয়নের হাতে হাত লাগাই।
মোসাম্মৎ সারমিন সুলতানা: বাংলা বিভাগ, অনার্স প্রথম বর্ষ, নিউ গভারমেন্ট ডিগ্রী কলেজ, রাজশাহী।
এএইচ