ঢাকা, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪ | ২৯ আশ্বিন ১৪৩১ | ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

বিশ্ব বাইসাইকেল দিবস পালন ও প্রসঙ্গিক কথা

বিশ্ব বাইসাইকেল দিবস পালন ও প্রসঙ্গিক কথা

ফাইল ছবি

আমিনুল ইসলাম টুববুস: বর্তমান চা ও বিস্কিট থেকে শুরু করে পৃথিবীতে অসংখ্য দিবস পালন করা হয়। ২০১০ও ১২ সালে দেশে প্রথম সাইক্লিস্টদের অধিকার ও মর্যাদার  রক্ষার্থে বাইসাইকেল দিবসের দাবীতে  আমরা বিভিন্ন কর্মসূচী শুরু করলে অনেকেই এ নিয়ে হাসি-ঠাট্টা শুরু করে এবং পাগলের প্রলাপ বলেও কটূক্তি করতে ছাড়েনি। 
সাইক্লিস্টদের শুনতে হয়েছে অনেক  কথা। এ-আন্দলোনের ফসল আজ সাইক্লিস্টদের জন্য অনেকটা সুখবর!

১২ এপ্রিল ২০১৮, ৭২তম নিয়মিত অধিবেশনে, জাতিসংঘ কর্তৃক ৩ জুন বিশ্ব বাইসাইকেল ডে ঘোষণা করা হয়। এ সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদের পক্ষ থেকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়সহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন করা হয়।

তবে এ দিবসটি পালন করা হলেও বাংলাদেশে সাইক্লিস্টরা প্রকৃতভাবে এখনো উপকৃত হচ্ছে না। বাইসাইকেল কেবল একটি পণ্য, এখানে বাইসাইকেলের
বাণিজ্য হচ্ছে, সাইক্লিস্টদের মর্যাদা রক্ষায় সাজিক সেবা  থেকে অনেকে পিছু হটছে। সাইক্লিস্টদের নিরাপদ পথ চলার জন্য সাইকেল লেন বাস্তবায়নের দাবিতে
 আমরা সম্পৃক্ত ও সমন্বয় তৈরী করতে ব্যর্থ হচ্ছি। এর একমাত্র কারণ  সঠিক সচেতনতার অভাব ওপরিকল্পিত পরিবেশ বান্ধব সড়ক না থাকা।  

অসহনীয় যানজটে অতিষ্ঠ নগরবাসী। প্রতিদিন ৮০ লাখের বেশি কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় যানজট ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করছে। শুধু ঢাকার যানজটের কারণেই বছরে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ২ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১৫-১৬ সালের হিসাবে অর্থমূল্যে এ ক্ষতির পরিমাণ ১ লাখ ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। গবেষণায় আরও বলা হয়, দেশের অর্থনীতিতে পদ্মা সেতু সবচেয়ে বড় অবদান রাখবে। এই সেতুর নির্মাণ ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা হলে রাজধানীর যানজটের কারণে প্রত্যক্ষ যে ক্ষতি হচ্ছে, তা দিয়ে নির্মাণ করা যেত পদ্মা সেতুর সমান ও সুবিধার তিনটি সেতু। 

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, উন্নয়ন পরিকল্পনায় যানজট না কমে বেড়েছে। বেড়েছে যেমন জনদুর্ভোগ,তেমনিভাবে  নাগরিক স্বাস্থ্য, পরিবেশ দিন দিন 
ক্ষতিগ্রস্তর হচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় হচ্ছে সঠিক সমস্যাটা চিহ্নিত করা। বাইসাইকেলও পারে এ সমস্যা সমাধান করতে। বাইসাইকেলের উন্নত বিশ্বে পৃথিবীর অনেক দেশে সাইকেল কেন্দ্রিক নেটওয়ার্ক যাতায়াত ব্যবস্থা রয়েছে। পৃথিবীকে বাসযোগ্য গড়ে তুলতে হলে দেশে যত বেশি সাইকেল লেন তৈরী হবে, তত বেশি কার্বণ নিঃসরণ কমাতে সক্ষম হব। 

আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতিতে যতদিন সাইক্লিস্ট-এর মর্যাদা ও সুরক্ষা প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততদিন বাইসাইকেল কেবল একটি পণ্যতে পরিণত হয়ে থাকবে, বাইসাইকেল। বহির্বিশ্বে দেশের বেকার বিভিন্ন বয়সীদের কাছে লাইফ ইস্টাইল ও জীবন, জীবিকা সমন্বয়ের আয়ের একটি উৎস, একে  এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সহজ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে যাচ্ছে। কেবল নাগরিক সুস্বাস্থ্য গঠন,পরিবেশ উন্নয়য়ন, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ, যানজট নিরসন ও নিরাপদ পথচলার মাধ্যম হিসাবে সাইকেল লেন হতে পারে নগর যানজট দূরীকরণ, কৃষি, শিল্প, বানিজ্য, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সহায়ক। 

সাইক্লিং একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম অপরিহার্য উপাদান এবং সর্বমহলে নিরাপদ। যার যার জায়গা থেকে বিশ্ব বাইসাইকেল দিবসের পাশাপাশি ও সাইক্লিং ও সাইকেল লেন দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরা জরুরি। এতে সাইকেলের উপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পাবে, জনগণের চলাচলে ব্যয় সাশ্রয় হবে। জীবাষ্ম জ্বালানী তথা প্রেট্রোল, ডিজেল, অকটেন চালিত গাড়ির ও জীবাষ্ম জ্বালানীর আমদানী হ্রাস পেয়ে দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়সহ দেশের নাগরিকগণ সুঠাম ও দীর্ঘকায় দেহের অধিকারী হবে, যা নাগরিকদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য খাতের ব্যয় হ্রাস করবে। সর্বোপরি শহরাঞ্চলের যানজট হ্রাস করে কর্মঘন্টা বৃদ্ধি ও মানসিক স্বাস্থ্যর উন্নয়ন ঘটবে। 

লেখক: সভাপতি,বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ।