ছবি: গ্লোবাল টিভি
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ জেন্ডার সমতা নিশ্চিতের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হতে পারে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। বুধবার রাজধানীর এমজেএফ আলোক অডিটোরিয়ামে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আয়োজিত রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যান্ড জেন্ডার ইমপ্যাক্ট শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
উইমেন্স এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড এনার্জি প্রজেক্টের আওতায় এমজেএফের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণাটি করেছে ইন্সপাইরা অ্যাডভাইজরি অ্যান্ড কনসালটিং লিমিটেড। গবেষণা ফলাফল উপস্থাপনের সময় ইন্সপাইরার পরিচালক সালমান রহমান বলেন, ‘প্রথাগতভাবে এ দেশে নারীরাই মূলত বাড়ির রান্নার কাজের সঙ্গে জড়িত। তবে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পুঁজির ওপর নিয়ন্ত্রণের অভাব নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নারীর সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে। জ্বালানি সংক্রান্ত সরকারি কোনো নীতিমালা বা পরিকল্পনাতেও নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি অনুপস্থিত থাকায় জেন্ডার সমতা নিশ্চিতে যথেষ্ট উদ্যোগ দেখা যায় না।’
নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিত্বকারী ৩৬ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার এবং বাংলাদেশ ও একই ধরনের অর্থনীতির চারটি দেশ ও এই খাতে এগিয়ে থাকা আরও চার দেশের সংশ্লিষ্ট নীতিমালা ও পরিকল্পনা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে গবেষণা ফলাফল তৈরি হয়েছে। এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংক্রান্ত নীতিমালার মূল স্রোতধারায় জেন্ডার সমতার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে নারীর ক্ষমতায়ন ও জ্বালানি রূপান্তর প্রক্রিয়ার ন্যায্যতা নিশ্চিত করা।
গবেষক সালমান তার উপস্থাপনায় জানান, পর্যাপ্ত জ্ঞান, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার অভাবে এবং জেন্ডার বৈষম্যের কারণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারণী অবস্থানে নারীরা পৌঁছাতে পারছে না। এতে জেন্ডার বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। প্রশিক্ষণ দেয়া গেলে তৃণমূল পর্যায়ের নারীরাও শুধু নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারকারী হিসেবে নয়, টেকনিশিয়ান, ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপক হিসেবেও ভূমিকা রাখতে পারে।
গবেষণার আলোকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ২০২৩ এবং সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা ২০২২ এখনও খসড়া পর্যায়ে আছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার একটি লক্ষ্য জেন্ডার সমতা অর্জনের জন্য এই দুই নীতিমালায় নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিতভাবে যুক্ত করা প্রয়োজন। তবে শুধু নীতিমালায় সংযোজনই যথেষ্ট নয়। এর সঙ্গে প্রয়োজন যথাযথ পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি।
প্রধান অতিথি বলেন, ‘দেশে জ্বালানির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দশ বছর আগেও ভাবা হয়নি আমাদের এত বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। গ্রামাঞ্চলেও এখন অনেকে এসি, রাইস কুকার ইত্যাদি যন্ত্রাদি ব্যবহার করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এনার্জি ডিপ্লোম্যাসি নিয়ে যেভাবে কাজ করেছেন, বিশ্বের অনেক সরকারপ্রধানই তা করেননি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বেশ কয়েকটি চুক্তি হয়েছে। প্রায় ৩৩টি নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। আমাদের সোলার, উইন্ড পাওয়ার আছে। একটি হাইড্রো পাওয়ার প্ল্যান্টও আছে।’
অনুষ্ঠানের সভাপ্রধান মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে সাধারণত তেমন আলোচনা হয় না। অথচ গৃহস্থালি কাজে জ্বালানি ব্যবহারের সঙ্গে মূলত নারীরাই জড়িত। নবায়নযোগ্য জ্বালানিই আমাদের ভবিষ্যত। এই খাতে আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং নারীদের কথা মাথায় রেখে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।’