ফাইল ছবি
গ্লোবাল ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জার মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ১০০ বছর ছয় মাস। স্থানীয় সময় বুধবার (২৯ নভেম্বর) কানেকটিকাটে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান।
চলতি বছর ২৭ মে একশ বছর পূর্ণ করেন তিনি। জার্মান বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক বিভিন্ন সময় সেনাসদস্য, গোয়েন্দা কর্মকর্তা, হার্ভার্ড ছাত্র ও কূটনীতিক হিসেবেকাজ করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বরাজনীতিতে শান্তির বার্তার বাহক যুক্তরাষ্ট্র তার নেতৃত্বে ফের সর্বোচ্চ শক্তিধর রাষ্ট্রের প্রভাব বলয় নিয়ে সক্রিয় হয়। কোনো সময় নৈতিক কূটনীতির বাহক হলেও কখনো আবার বিভিন্ন দেশে উসকে দিয়েছেন বৈপ্লবিক সংগ্রাম ও ইন্ধন দিয়েছেন সামরিক জান্তা সরকারকে। তার কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। তার কূটনৈতিক কার্যাবলির নথিপত্রের আনুমানিক ওজন ৩০ টন।
জার্মানির শহর নুরেমবার্গের অদূরে জার্মান-ইহুদি মা-বাবার সন্তান হেনরি কিসিঞ্জারের জন্ম ১৯২৩ সালের ২৭ মে। নাৎসি জামার্নির শাসনামলে তাদের শিশুদের সঙ্গে জোরপূর্বক ফুটবল খেলায় অংশ নিতে চাইত না শিশু কিসিঞ্জার। সেই সঙ্গে ইহুদিদের ওপর নাৎসিদের চাপিয়ে দেয়া বিধিনিষেধের প্রতিবাদ করতেন শিশু বয়স থেকে।
তবে তার মানসিক শক্তি ও কাজের যোগ্যতা প্রকাশিত হয় ত্রিশ দশকের শুরুতে শরণার্থী হয়ে যখন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। সেখানে একটি নৈশ স্কুলে ভর্তি করা হয় তাকে। দিনের বেলায় শেভিং ব্রাশ তৈরির কারখানায় কাজ করত সে।
এ সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘনঘটায় তার উচ্চশিক্ষায় বাধা হয়ে আসে। এ সময় সমরকালীন বিশেষ সেনা হিসেবে কাজে যোগ দেন তিনি। পরে তাকে পদোন্নতি দিয়ে প্রশাসনিক কাজে নিয়ে আসা হয়। এভাবে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তার অনুরাগ ও আনুগত্য বাড়তে থাকে।
১৯৬৯ সালে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তার উচ্চশিক্ষা এ ক্ষেত্রে তাকে নানাভাবে সহায়তা করে।
কূটনীতিতে কিসিঞ্জারের দূরদর্শিতা এবং অভিনব পন্থা তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
উনিশ শতকের বৈশ্বিক রাজনীতি ও নব্য সাম্রাজ্যবাদের চর্চায় তার বাস্তবধর্মী নীতিমালা হয়ে ওঠে মূল দর্পণ।
১৯৭৩ সালে হেনরি কিসিঞ্জারকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়াকে তার অভিনব কূটনীতিক কৌশলের প্রতি রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি।
নিক্সন, চৌ এন লাই ও মাও সে তুংয়ের মধ্যে ১৯৭২ সালের ঐতিহাসিক সম্মেলনের ধারাকে আরও এগিয়ে নিতে হেনরি কিসিঞ্জার চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অচল কূটনীতিক সম্পর্ককে পুনরায় চালু করেন। স্নায়ুযুদ্ধের সেই ঐতিহাসিক বিরোধিতাকে নির্মূল করে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাত করে ফেলেন। সেই একই সময়ে কিসিঞ্জার চিলিতে সামরিক অভ্যুত্থানে ইন্ধনদাতার ভূমিকা রাখেন।
একই সঙ্গে আরব দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ইসরাইলে বিপুল পরিমাণে সামরিক অস্ত্র ও গোলা সরবরাহ করে। ওই অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্য রক্ষায় এমন ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তিনি। এর পর কোনো আরব দেশ ইসরাইলে সরাসরি হামলা চালানো থেকে বিরত থাকে।
চিলির সামরিক অভ্যুত্থান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও পূর্ব তিমুর ও কম্বোডিয়ার বোমা হামলায় হেনরি কিসিঞ্জারের বিতর্কিত সম্পৃক্ততা এখনো বিশ্বরাজনীতিতে তাকে নিন্দিত ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করে।