ছবি: সংগৃহীত
আজকালকার গাড়িতে চালকের সহায়তা করতে নানা রকম প্রযুক্তি কাজে লাগানো হচ্ছে৷ ফলে নিরাপত্তা ও আরাম দুটোই বাড়ছে৷ ভবিষ্যতে অটোনমাস বা স্বচালিত যান বাজারে ছড়িয়ে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন৷অটোনোমাস ড্রাইভিং ধীরে হলেও বাস্তব হয়ে উঠছে৷ আরো বেশি গাড়ি ও চালক আধুনিক প্রযুক্তির উপর নির্ভর করছেন৷ লেন কিপিং, সোয়ার্ভিং ও ব্রেকিং অ্যাসিস্টেন্ট আজকাল অনেক গাড়িতেই দেখা যায়৷ তবে পুরোপুরি স্বচালিত গাড়ির জন্য আরো আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োজন৷ কন্টিনেন্টাল কোম্পানির ইয়ুর্গেন ব্রুগার মনে করেন, শুধু রাডার ও ক্যামেরা এই চ্যালেঞ্জের জন্য যথেষ্ট নয়৷ তবে লাইডারও যোগ দিলে আমরা কাঙ্ক্ষিত জোর পাবো৷
লাইডারের অর্থ লাইট ডিটেকশন অ্যান্ড রেঞ্জিং এই প্রণালী সরাসরি লেজারের সাহায্যে উচ্চ মানের ত্রিমাত্রিক তথ্যের জোগান দেয়৷ যে সব ভ্যাকুয়াম ক্লিনার রোবট ঘর স্ক্যান করে, সেগুলির মধ্যেও এই প্রযুক্তি রয়েছে৷ অথবা আইফোনেও এভাবে থ্রিডি স্ক্যানের ব্যবস্থা রয়েছে৷ মহাকাশে অত্যন্ত জটিল কার্যকলাপের ক্ষেত্রেও এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হয়৷ সেখানে মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশে ন্যাভিগেশন একেবারে নিখুঁত হওয়া জরুরি৷ বিশ্ববিখ্যাত উদ্যোগপতি ইলন মাস্ক এই প্রযুক্তির প্রয়োগ সম্পর্কে বলেন, স্পেসএক্স ড্রাগন লাইডার ব্যবহার করে স্পেস স্টেশনে গিয়ে ডকিং করে৷ স্পেসএক্স একেবারে শুরু থেকে নিজস্ব এই লাইডার তৈরি করেছে৷ আমি নিজে ব্যক্তিগতভাব সেই উদ্যোগের নেতৃত্ব দিয়েছি৷ কারণ সেই পরিস্থিতিতে লাইডারের ব্যবহার অবশ্যই যুক্তিযুক্ত৷ গাড়িতে বসালে সেটা হবে চূড়ান্ত বোকামি৷ এটি অত্যন্ত দামী ও অপ্রয়োজনীয়৷
জার্মানির গাড়ির যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী কোম্পানি বশ-ও সেটাই মনে করে৷ বেশিরভাগ যানেই এখনো আংশিক অটোমেটেড ড্রাইভিং প্রযুক্তি রয়েছে৷ সেই প্রযুক্তি চালকের সহায়তার জন্য, তার জায়গা নেবার জন্য নয়৷ প্রযুক্তির পরিভাষায় একে লেভেল টু বলা হয়৷ বশ কোম্পানির স্ভেন লানভেয়ার বলেন, বাজারে লেভেল-টু গুণাগুণের বিপুল চাহিদা রয়েছে৷ আমরা দেখছি, বাজারের ৬০ শতাংশ চলতি দশকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে লেভেল-টু গুণাগুণ চাইছে৷ তাই আমরা এই সব বিষয়গুলির প্রতি নজর দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ এই সব বিষয়ের ক্ষেত্রে যানের মধ্যে লাইডার থাকা আবশ্যিক নয়৷ তার বদলে আমরা মূলত ভিডিও পার্সেপশন, ভিডিও সেন্সর ও রাডার সেন্সরের মতো প্রযুক্তির উন্নতির প্রতি মনোযোগ দিচ্ছি৷ বশ আপাতত বর্তমান প্রযুক্তির উন্নতির উপর জোর দিচ্ছে৷ বাজারে লাইডার প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ বাড়া পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করতে চায়৷ তবে কোনো এক সময়ে সেটা ঘটবেই৷ আন্তর্জাতিক গাড়ি প্রদর্শনী আইএএ-তে অটোনমাস ড্রাইভিং বড় বিষয় ছিল৷ সেই প্রযুক্তি ছাড়া গাড়ি চালানোর কথা আজকাল ভাবাই যায় না৷
কন্টিনেন্টাল কোম্পানির ইয়ুর্গেন ব্রুগার বলেন, আমরা দেখছি, ভবিষ্যতের গাড়ি স্বচালিত হবে৷ সেখানে রাজপথে মজবুত ও নির্ভরযোগ্য তৃতীয় প্রযুক্তি হিসেবে আমাদের লাইডারের প্রয়োজন হবে৷ আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সেটা শুরু হবে৷ প্রথমে ছোট আকারে শুরু হবে৷ তারপর আগামী পাঁচ, ছয়, সাত বছরে সে ক্ষেত্রে বৃদ্ধি দেখা যাবে৷ একেবারে প্রথম ঝাঁকের সম্পূর্ণ অটোনোমাস গাড়িগুলি এখনই সান ফ্রানসিস্কো শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে থাকলেও ভবিষ্যতে অবশ্যই এমন গাড়ি স্বাভাবিক দৃশ্য হয়ে উঠবে৷
ডয়চে ভেলে