ছবি: ডয়েচে ভেলে
সেন্থিল কুমার, ডয়চে ভেলে: বাতিল জিনিস যত বেশি কাজে লাগানো যায়, পরিবেশের জন্য সেটা ততই ভালো৷ ভারতের চেন্নাই শহরের এক নারী বাতিল শিপিং কন্টেইনার বাসা, অফিস বা ক্যাফে তে রূপান্তরিত করে একাধিক সমস্যার সমাধান করছেন৷এখন দেখলে বিশ্বাস না হলেও এটা কোনো এক সময়ে শিপিং কন্টেইনার ছিল৷ এখন রূপান্তর ঘটিয়ে ও সাজসজ্জা যোগ করে ভবিষ্যতের বাসিন্দার জন্য সেটি প্রস্তুত করা হয়েছে৷ ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেটি ব্যবহার করা যাবে৷ ভানমতি ও তার কোম্পানি পরিত্যক্ত কার্গো উপকরণ বাসা ও অফিসে রূপান্তর করছেন৷ ছোট করেই সেই উদ্যোগ শুরু হয়েছিল৷
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন,শুরুর দিকে আমরা গাছের নীচে শুধু মেরামতির কাজ করতাম৷ আমাদের একটা ওয়েল্ডিং ও কাটিং মেশিন ছিল৷ শুধু আমি, আমার স্বামী ও একজন ওয়েল্ডার ছিলাম৷ তারপর কন্টেইনারের অর্ধেক অংশ নিজেদের ব্যবহারের জন্য সাজিয়ে তুললাম৷ আলো আর পাখা লাগিয়ে আমাদের মাথায় ব্যবসার আইডিয়া এলো৷ এই সব কন্টেনার দিয়ে থাকার জায়গা তৈরি করার সংকল্প নিলাম৷ ভানমতি চেন্নাই ও তুতুকুড়ি বন্দর থেকে বাতিল শিপিং কন্টেনার সংগ্রহ করেন৷ তাঁর টিম সব ক্ষয়ক্ষতি মেরামত করে মরচে প্রতিরোধ করতে এক স্তর প্রোটেকটিভ কোটিং বা রং লাগায়৷ তারপর গ্রাহকের বায়না অনুযায়ী কন্টেনারগুলি সাজানো হয়৷
ভানমতি বলেন, মানুষ তাদের কন্টেইনার অর্ডার করতে এলে মনে হয় যেন তারা পারিবারিক পিকনিকে যাচ্ছেন৷ প্রথমদিকে পুরুষরাই সব সিদ্ধান্ত নিতেন৷ আজকাল মা, মেয়ে, বউ, শাশুড়ি, অর্থাৎ, পরিবারের মেয়েরাই ডিজাইন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন৷ তারাই রং, অভ্যন্তরীণ ফিচার, জানালা, টেবিল সবকিছু বাছাই করেন৷ বাতিল শিপিং কন্টেইনারকে বাসায় রূপান্তরিত করতে প্রায় ২০ দিন সময় লাগে৷ রান্নাঘর, বাথরুম, জানালা ও বিদ্যুতের লাইনসহ এমন এক বাসার দাম প্রায় তিন লাখ ভারতীয় টাকা৷ কংক্রিটের তৈরি বাসভবনের তুলনায় কিছু পরিবেশগত সুবিধাও রয়েছে৷
পরিবেশ অ্যাক্টিভিস্ট জিও দামিন বলেন, এক কিলো সিমেন্ট উৎপাদন করতে গেলে এক কিলো কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন ঘটে৷ ফলে লোহার রড ও সিমেন্ট দিয়ে তৈরি কংক্রিটের বাড়ি বিশাল পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড সৃষ্টি করে৷ তাছাড়া নির্মাণের ব্যয় প্রতিদিন বেড়েই চলেছে৷ ফলে মধ্য ও ক্ষুদ্র আয়ের মানুষের পক্ষে প্রচলিত বাসা কেনার সামর্থ্য কমে যাচ্ছে৷ এই সব কন্টেনার শুধু সাশ্রয়ী বাসায় রূপান্তরিত করা যায় না৷ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিকদের জন্যও এটি আকর্ষণীয় হতে পারে৷
ক্যাফের মালিক হিসেবে রমেশ নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, আমি নিজের মতো করে নিজস্ব ক্যাফে চালু করতে চেয়েছিলাম৷ আমি সেটিকে অনন্য করতে চেয়েছিলাম৷ তাই আমি এই কন্টেনার বেছে নিলাম৷ সুবিধা হলো, এটিকে যে কোনো জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়৷ গ্রাহকদের কাছেও এটি আকর্ষণীয় এবং চালানোও সহজ৷ কারণ, এখানে কোনো ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ নেই, আকারে ছোট এবং পকেটের নাগালের মধ্যেই রয়েছে৷'' ভানমতি এখনো পর্যন্ত তিন হাজারেরও বেশি কন্টেইনার বাসা তৈরি করেছেন৷ বেশিরভাগ কন্টেইনারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রয়েছে, তবে কোনো ইনসুলেশন নেই৷ তিনি অদূর ভবিষ্যতে হাসপাতাল ও শপিং মল তৈরির কথাও ভাবছেন৷ কন্টেইনারের সত্যি কোনো অভাব নেই৷