ঢাকা, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫ | ৯ চৈত্র ১৪৩১ | ২২ রমজান ১৪৪৬

পঙ্কজ উদাস আর নেই

পঙ্কজ উদাস আর নেই

ছবি: সংগৃহীত

গ্লোবাল ডেস্ক: প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী পঙ্কজ উদাস আর নেই। সোমবার চির বিদায় নিলেন গজলের সম্রাট পঙ্কজ। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। মেয়ে নায়াব উদাস সোশ্যাল মিডিয়ায় জানালেন এই শোক সংবাদ। 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার এক্স অ্যাকাউন্টে এক পোস্টের মাধ্যমে জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। মোদি এই পোস্টে লিখেছেন, পঙ্কজ উদাসের প্রয়াণে আমি শোক ব্যক্ত করছি। 

শোক প্রকাশ করে শিল্পী সোনু নিগম সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, আমার শৈশবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ আজ হারিয়ে গেছে। শ্রী পঙ্কজ উদাসজি, আমি আপনাকে আজীবন মিস করব। আপনি যে আর নেই তা জেনে আমার হৃদয় কান্নায় ভেঙে পড়ছে। পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

গুজরাটের জোতপুরে এক কৃষক পরিবারে জন্ম পঙ্কজ উদাসের। সময়টা ১৯৫১ সালের ১৭ মে। অবশ্য পূর্বপুরুষদের একসময় জমিদারি ছিল। সেই পরিবারেই সংগীতের সঙ্গে বড় হতে থাকেন তিনি। শৈশব কাটে দুই ভাইয়ের গান শুনে। তার ভাই নির্মল উদাস ও মানহার উদাস গান করতেন। সে সময় গান গেয়ে তাঁরা সফলতার খাতায় নাম লেখান। যে কারণে পঙ্কজ উদাসকে আর গান গাওয়া নিয়ে পরিবার থেকে কেউ কিছু বলেননি। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে গানের প্রতি ভালোবাসা জন্ম নেয়ায় এক সময় সংগীতই ধ্যানজ্ঞান হয়ে ওঠে তার। 

১৯৮০ সালে প্রকাশিত হয় তার নয়া গজল অ্যালবাম। ‘আহাট’ নামে অ্যালবাম প্রকাশ করে তিনি তার সংগীতজীবন শুরু করেন। কালক্রমে তিনি ভারতে হয়ে ওঠেন গজল সংগীতের সমার্থক। বলিউডে সঞ্জয় দত্ত অভিনীত ‘নাম’ ছবির জন্য বিখ্যাত ‘চিঠঠি আয়ি হ্যায়’ গানটি গেয়ে তিনি পৌঁছে যান জনপ্রিয়তা শীর্ষে। ছবিটি পরিচালনা করেছেন মহেশ ভাট। এই গানে চোখ ভিজেছিল  সংগীতপ্রেমীদের।

 

তার দুই ভাইও  গান করতেন। সে সময় উদাস পরিবার গুজরাট থেকে মুম্বাইয়ে চলে আসে। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন পঙ্কজ। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ডিগ্রি নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেন। তখনো পেশাগতভাবে গান শুরু করেননি। বিজ্ঞানের জ্ঞান নিয়ে ক্ল্যাসিক ভোকাল মিউজিকে মুম্বাইয়ের মাস্টার নাভরাং থেকে ট্রেনিং নেন তিনি। ভারতের শাস্ত্রীয় সংগীতে দক্ষতা অর্জনের সেই সময় পঙ্কজ উদাস প্রথম একটি সিনেমায় গান করেন। নাম ছিল ‘কামনা’। সিনেমাটি ফ্লপ হয়। তবে তার গাওয়া গানটি প্রশংসিত হয়। পরে আর সিনেমা নয়, গজলের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায় তার। উর্দুতেও তিনি গজল গাইতে থাকেন।

পঙ্কজ উদাস প্রথমে স্বল্প পরিসরে পাড়া–মহল্লায় গজল গেয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।  ১৯৮০ সালে ‘আহাট’ নামে গজলের অ্যালবাম বের করার সুযোগ পান তিনি। পরের বছর রেকর্ড করেন ‘মুকারার’। তার পরের বছর ‘তারান্নাম’, ‘ম্যাহফিল’সহ একাধিক অ্যালবাম দিয়ে নজর কাড়েন এই তরুণ। শ্রোতামহলে পৌঁছে যায় তাঁর জাদুকরি কণ্ঠ। তিনি সব শ্রেণির ভক্তদের হৃদয় জয় করতে থাকেন। অন্য রকম কণ্ঠের জন্য দ্রুত পরিচিতি বাড়তে থাকে তাঁর। পরিচিতি পেতে থাকেন গজলশিল্পী হিসেবে। ‘চান্দি জ্যায়সা রং’, ‘না কাজরে কি ধার’, ‘দিওয়ারো সে মিলকার রোনা’, ‘আহিস্তা’, ‘থোড়ি থোড়ি পেয়ার করো’, ‘নিকলো না বেনাকাব’—পঙ্কজ উদাসের গাওয়া অসাধারণ সব গজল মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সে সময় গজলের গায়ক হিসেবে কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের কনসার্টে তার ডাক পড়তে থাকে।

হঠাৎ একদিন বলিউডের জনপ্রিয় পরিচালক মহেশ ভাটের প্রডাকশন হাউস থেকে ডাক আসে। ‘নাম’ সিনেমায় গান করতে হবে পঙ্কজ উদাসকে। ১৯৮৬ সালে আবার সিনেমার গানে নাম লেখান। গানটি ছিল, ‘চিঠঠি আয়ি হ্যা, আয়ি হ্যা, চিঠঠি আয়ি হ্যায়...’। এই গান সব মহলে তুমুল আলোচিত হয়। এরপর সিনেমায় একের পর এক তাঁর ডাক পড়ে। পরবর্তীকালে তিনি অনেক সিনেমায় গান করেন। গানই তাঁকে ভারতীয় উপমহাদেশে শ্রোতাদের কাছে পঙ্কজ উদাস হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়।

গান নিয়ে যেমন ব্যস্ত থাকতেন, তেমন ব্যক্তিজীবনে পরিবারকেও সময় দিতেন পঙ্কজ উদাস। শোনা যায়, ব্যক্তিজীবনে ধূমপান ও অ্যালকোহল তাকে তেমন একটা ছুঁতে পারেনি। কিছুটা আড়ালে থাকতেই পছন্দ করতেন তিনি। তবে গানের পাশাপাশি ক্রিকেট ও গলফ খেলতে ভালোবাসতেন। 

তিনি মেহেদী হাসান, বেগম আক্তার ও দ্য বিটলসের গান শুনতে পছন্দ করতেন। সময় পেলেই সিনেমা দেখতেন পঙ্কজ উদাস। 

সারা বিশ্বজুড়ে কনসার্ট করতেন গজলের সম্রাট পঙ্কজ উদাস। শুধু গজলই নয়, নব্বইয়ের সময়ে মিউজিক অ্যালবামেও বাজিমাত করেছিলেন পঙ্কজ। তার ‘আহিস্তা কি জিয়ে বাঁতে...’ আজও মুখে মুখে ফেরে সংগীতপ্রেমীদের। বাংলা, হিন্দি, উর্দুসহ বিশ্বের অনেক ভাষায় গান গেয়ে সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি।

দেশে-বিদেশে বহু সম্মান ও পুরস্কারের পাশাপাশি তিনি পেয়েছেন পদ্মশ্রী সম্মান।