ঢাকা, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অগ্নিঝরা মার্চ: ১৯ মার্চ ১৯৭১

অগ্নিঝরা মার্চ: ১৯ মার্চ ১৯৭১

গ্লোবাল টিভি ছবি

আজ ১৯ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে উত্তাল বাংলাদেশে স্লোগান উঠেছিল, গাজীপুরের পথ ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর।

দিনটি ছিল শুক্রবার। এই দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের প্রথম কোন সশস্ত্র প্রতিরোধ হয় গাজীপুরের জয়দেবপুরে। জয়দেবপুরের ভাওয়াল রাজবাড়িতে (বর্তমানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়) অবস্থান ছিল দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের। এ রেজিমেন্টের ২৫-৩০ জন পশ্চিম পাকিস্তানি ছাড়া বাকি সবাই ছিলেন বাঙালি অফিসার-সৈনিক।

একদিকে চলছিল স্বাধীনতার জন্য অসহযোগ আন্দোলন, অন্যদিকে পাকিস্তানি সামরিক জান্তাও বাঙালিদের চিরতরে দাবিয়ে রাখার জন্য এঁটে যাচ্ছিল ষড়যন্ত্রের নীল নকশা। এ ষড়যন্ত্রের একটি অংশ ছিল বিভিন্ন সেনানিবাসে অবস্থানরত বাঙালি অফিসার-সৈন্যদের বিচ্ছিন্ন করে কৌশলে তাদের নিরস্ত্র করা।

ঢাকার ব্রিগেড সদর দফতর থেকে নির্দেশ এলো, ১৫ মার্চের মধ্যে রাইফেলগুলো গুলিসহ ব্রিগেড সদর দফতরে জমা দিতে হবে। কিন্তু বাঙালি অফিসার-সৈনিকরা অস্ত্র জমা দিতে অনিচ্ছুক। ওই সময় ঢাকার ব্রিগেড কমান্ডার পাকিস্তানী এক ব্রিগেডিয়ার নিজেই ১৯ মার্চ দুপুরের জয়দেবপুর সেনানিবাসে উপস্থিত হলেন। বাঙালি সৈন্যদের পাঞ্জাবিরা নিরস্ত্র করতে এসেছে, এ খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে।

মুহূর্তে পাল্টে যায় চিত্র। ১০ হাজারের ও বেশি মুক্তিকামী জনতা জড়ো হন জয়দেবপুর থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রায় ১৫০টির মত ব্যারিকেড দিয়ে। জনতার হাতে ছিল লাঠিসোটা। পাকিস্তানী ব্রিগেডিয়ার সেনানিবাসে বসেই এ খবর পান। তিনি ব্যারিকেড অপসারণ করার জন্য নির্দেশ দেন। জনতা ক্ষোভে ফেটে পাঞ্জাবি ব্রিগেডিয়ারকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, ব্যারিকেড সরানো হবে না। এরপর পাকিস্তানী ব্রিগেডিয়ার সামনে বাঙালি সৈন্য ও পেছনে পাকিস্তানী সৈন্য নিয়ে রওয়ানা হন ঢাকার দিকে কিন্তু ব্যারিকেডের জন্য এগোতে না পেরে গুলিবর্ষণের নির্দেশ দেন।

সেই দিন পাকিস্তানি সৈন্যদের গুলিতে জয়দেবপুর বাজারে শহীদ হন কিশোর নিয়ামত ও মনু খলিফা। চান্দনা-চৌরাস্তায় প্রতিরোধকালে হুরমত আলী নামে এক যুবক একজন পাকিস্তানী সৈন্যের রাইফেল কেড়ে নিয়ে গুলি করতে চেষ্টা করেন। সে সময় অপর একজন পাকিস্তানী সৈন্যের গুলিতে হুরমত আলী শহীদ হন। এ ছাড়া গুলিতে আহত হন ইউসুফ, সন্তোষ ও শাহজাহানসহ আরও অনেকে।