ছবি: সংগৃহীত
ডা. নাসির উদ্দিন: পবিত্র হজের ফ্লাইট শুরু হতে যাচ্ছে। এবার বাংলাদেশ থেকে প্রায় চুরাশি হাজার মুসল্লি পবিত্র মক্কা যাবেন ইনশাআল্লাহ। হাজীগণ সৌদি আরবে অবস্থান কালে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হন। যার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হয়। আজকের লেখায় সেরকম কিছু সমস্যার বিষয়ে পরামর্শ দেয়ার চেষ্টা করব।
১. বিমানে যাত্রা করলে বিমান ওঠানামার সময় অনেকের কান লক হয়ে যায় অর্থাৎ কান ব্লক হয়ে যায়, তীব্র ব্যথা অনুভব হয়, অনেকের কান ফেটে যায়, পানি চলে আসে। তাই পূর্ব থেকেই নাকে ড্রপ ব্যবহার করুন, এন্টি হিস্টামিন ওষুধ সেবন করুন। বিশেষ করে বিমানে ওঠার আগে নাকে ড্রপ ব্যবহার করুন, অবতরণের সময় মুখ খোলা রেখে শ্বাস নিন, চুইংগাম বা চকোলেট খেতে পারেন, এতে মুখের চোয়াল নড়াচড়া করবে, ফলে নাকের ও কানের সংযোগ টিউব খোলা থাকবে। এতে কানে ভেন্টিলেশন হবে। বায়ুর চাপ সহজে মেনটেইন হবে। ফলে কান লক কম হবে। তাই বিমানে ভ্রমনের আগে নাকের ড্রপ, এন্টিহিস্টামিন ঔষুধ হ্যান্ডব্যাগে রাখবেন।
২. হজের দিনগুলোতে প্রচুর হাঁটতে হয়। বিশেষ করে হারাম শরীফে আসা-যাওয়া, কাবাঘর তাওয়াফ করার সময় পাঁচ দিন প্রচুর হাটতে হয়। এতে পায়ে ব্যথা হয়। তাই ব্যথানাশক ওষুধ অবশ্যই সাথে নিয়ে যাবেন।
৪. সৌদি আরবে তুলনামুলক গরম আবহাওয়া হওয়ায় দিনে দুই-তিন বার ভেসলিন ব্যবহার আপনাকে আরাম দেবে।
৫. মসজিদুল হারামে নামাজ পড়তে যাওয়া ও আসার সময় দিনের বেলা প্রচুর রোদ থাকে। বিশেষ করে জোহর ও আসরের সময় অবশ্যই ছাতা নিয়ে যাবেন। ছাতা ছাড়া তপ্ত রোদে গরমে কষ্ট পাবেন। ফোল্ডিং ছাতা যা সহজে গুটানো যায়, সেগুলো সুবিধাজনক।
৬. মসজিদুল হারামে নামাজ পড়তে যেতে সব ওয়াক্তের নামাজে অবশ্যই জায়নামাজ সাথে নেবেন। কারন আপনি মসজিদের ভেতরে ঢুকতে পারবেন কিনা নিশ্চিত বলা যাবেনা। অনেক সময় বাইরে মাঠে, রাস্তায়, কবুতর চত্বর এসব জায়গায় নামাজ পড়তে হতে পারে। তাই জায়নামাজ সাথে থাকলে বিশেষ সুবিধা পাবেন।
৭. আপনার ব্যবহৃত জুতা/ সেন্ডেল নিরাপদ রাখার জন্য পলিব্যগ রাখা উচিত। জুতা রাখার জন্য আলাদা ব্যাগ না নিয়ে পলিব্যাগ রাখবেন। মসজিদে ঢোকার আগে পলিব্যাগে জুতা ঢুকিয়ে সেই জুতা আপনার কাঁধের ব্যাগে রাখবেন। এতে মসজিদও পবিত্র থাকলো, আপনার জুতাও নিরাপদ থাকলো।
৮. প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সাথে রাখার জন্য ছোট একটি ব্যাগই যথেষ্ট। সেই ব্যাগটি হতে পারে কাপড়ের দুই ফিতাওয়ালা ব্যাগ, যেটা পিঠে রাখা যায়। এই ব্যাগে পলিথিন মোড়ানো জুতা, ছাতা, জায়নামাজ, এক বোতল পানি, কিছু শুকনো খাবার, মোবাইল ইত্যাদি রাখতে পারেন। সেই ব্যাগটিই সবসময় সাথে রাখবেন।
৯. দীর্ঘক্ষণ মসজিদুল হারামে অবস্থানকালে অনেক সময় অজু করতে সমস্যা হতে পারে। আবার সব জায়গায় অজুর ব্যবস্থা থাকে না। বারবার বাইরে এসে অজুখানায় যাওয়া কষ্ট ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এরকম পরিস্থিতি হলে সহজে অজু করার জন্য আপনি একটা বড় আকারের পলিব্যাগ সাথে রাখবেন, এক বোতল পানি রাখবেন, অজু ছুটে গেলে বড় পলিথিন খুলে তাতে বোতল থেকে অল্প অল্প পানি দিয়ে সহজে অল্প পানি দিয়ে অজু করে নিতে পারেন। এরপর পানিসহ পলিথিনটি নিকটস্থ ডাস্টবিনে ফেলে দিতে পারেন।
১০. হজের দিনগুলোতে পরিমিত ও অল্প খাবার খাওয়া উচিত। সুস্থ থাকতে ও নিজেকে হালকা রাখতে এ সময়ে কম খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর রহমতে হাজীদের আপ্যায়নে প্রচুর খাবার দেয়া হয়। সব খাবার খাওয়ার লোভ সংবরণ করতে হবে। শুধু ক্ষুধা নিবারণের জন্য যেটুকু প্রয়োজন, সেটুকু গ্রহণ করবেন। এতে আপনি শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকবেন। ইবাদতগুলো সঠিক ভাবে পালন করতে পারবেন।
আরাফা ও মিনায় বিছানা, বালিশ চাদর ইত্যাদি সরবরাহ করা হয়। তাই অপ্রয়োজনীয় কিছু নেয়া লাগে না। কেবল পেস্ট, ব্রাশ, সাবান, মেসওয়াক এই জাতীয় জিনিস নিলেই চলবে।
শেষ কথা: আপনার প্রয়োজনীয় ওষুধ হ্যান্ড ব্যাগে নেবেন অর্থাৎ যে ব্যাগ বিমানে / গাড়িতে হাতে থাকবে, সেখানে নেবেন। যাতে প্রয়োজনের সাথে সাথে পেতে পারেন।
*ডা. নাসির উদ্দিন, কনসালটেন্ট (নাক কান গলা), সদর হাসপাতাল, লক্ষীপুর।