ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫ | ১২ বৈশাখ ১৪৩২ | ২৬ শাওয়াল ১৪৪৬

রাউজানে নিজগৃহে পরবাসী বিধবা পারুল

রাউজানে নিজগৃহে পরবাসী বিধবা পারুল

গ্লোবাল টিভি ছবি

নেজাম উদ্দিন রানা, রাউজান (চট্টগ্রাম) : আশপাশে বেশ কয়েকটি পাকা দালান। তার পাশেই জীর্ণশীর্ণ একটি টিনের ঘর। বছরের অন্যান্য সময় কোনোরকমে কষ্টে দিনাতিপাত করলেও বর্ষা মৌসুমটাই বিধবা নারী পারুল আকতারের (৪৮) জীবনে অভিশপ্ত। ভাঙা ঘরে নষ্ট টিনের ফুঁটো দিয়ে গড়িয়ে পড়া বৃষ্টির পানিতে পুরো ঘরটাই স্যাঁতস্যাঁতে থাকে। 

রাউজানের পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের কাশেম মেম্বার বাড়ির এক ছেলে ও কন্যার সংসারে স্বামী নুর মোহাম্মদের মৃত্যুর পর একাই জীবনের সাথে যুদ্ধ করে সন্তানদের কোলেপিঠে মানুষ করেছেন। একমাত্র কন্যা সন্তানের বিয়ে দিয়ে বর্তমানে ভাঙা ঘরে মা, ছেলে তারেককে নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন। 

পারুল আকতার বলেন, ছেলে তারেক একটি চায়ের দোকান চালিয়ে পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। জীর্ণশীর্ণ ঘরটিতে থাকার পরিবেশ না থাকায় বেশ কয়েকবার কয়েকটি টিন পরিবর্তন করতে গেলেও বাধা দেন পাশের প্রতিবেশীরা। অথচ তারা নিজেদের ভিটেতে পাকা দালান করলেও আমাদের ঘরের টিন পর্যন্ত পরিবর্তন করতে দিচ্ছে না। সব সময় মামলার ভয় দেখিয়ে আমাদের একপ্রকার জিন্মী করে রেখেছে।

গত শুক্রবার জায়গাজমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে পারুল আকতার (৪৮) নামের এক বিধবা নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে রাউজান থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। মারধরের সময় বিধবা ওই নারীর চিৎকারে শুনে এলাকার লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এই ঘটনায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। এতে বিবাদী করা হয় পারুল আকতারের প্রতিবেশী মোঃ ফরিদ (৫৮), আবুল কাশেম (৬০), আশরাফুল (১৮), মুহাম্মদ সালমান (২৭), মুহাম্মদ জামাল (৩৭), বেলুয়া খাতুন (৫৫), সেলিনা আকতার (৪৫)সহ  অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১৫ জনকে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বাড়ির সামনের সড়কের পাশে স্বামীর খরিদকৃত জায়গার কিছু অংশ পারিবারিক প্রয়োজনে বিক্রয় করার চেষ্টা করলে বিবাদীগণ জায়গাটি বিক্রি করতে বাধা দেন। এমনকি ক্রেতাদেরকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়। যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে জায়গা বাদী বিক্রি করতে পারেননি। 

পারুল আকতার জানান, সন্তানের আয়ে সংসার চলতে কষ্ট হচ্ছে। নিজেদের জায়গার কিছু অংশ বিক্রির জন্য সম্প্রতি স্থানীয় রাশেদ নামের এক প্রবাসীর কাছে বিক্রির উদ্দেশ্য বায়না চুক্তি করেন তিনি। এ সময় বিক্রিকৃত অংশে সীমানা পিলার ও সাইনবোর্ড দেন ক্রেতা রাশেদ। শুক্রবার বিবাদীগণ পরস্পর যোগসাজসে আমার স্বামীর খরিদা জায়গায় অনধিকার প্রবেশ করিয়া সাইনবোর্ড এবং ৪টি সীমানা পিলার উপড়ে ফেলে। বাদী প্রতিবাদ করলে বিবাদীগণ এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি, লাথি মারিতে থাকে ওই নারীকে। তারা স্বামীর কেনা জায়গা জোর পূর্বক দখল করে নিতে চেষ্টা চালাচ্ছে। 

যার কাছে জমি বিক্রির বায়না হয় সেই ক্রেতা প্রবাসী রাশেদকে জড়িয়ে  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে ফরিদ গংরা। তাদের উদ্দেশ্য কিছুতেই যেন পারুল জায়গা জমি বিক্রি করতে না পারে। এখন রাশেদ নিজের টাকায় জমি কিনতে গিয়ে সমাজিকভাবে হেয় হচ্ছেন। 

এ প্রসঙ্গে বিবাদী মুহাম্মদ ফরিদ ও আবুল কাসেম বলেন, জায়গাগুলো নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। জায়গার রুপ পরিবর্তন না করতেও আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে। তাই আমরা তাদের বাধা দিয়েছি। তবে ফারুক আকতারের পরিবার চাইলে বিষয়টি সামাজিকভাবে সমাধান করলে আমরা রাজি আছি। 

রাউজান থানায় যোগাযোগ করা হলে ওসি জাহিদ হোসেন বলেন, অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।