ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫ | ১২ বৈশাখ ১৪৩২ | ২৬ শাওয়াল ১৪৪৬

৭ বছরেও শেষ হয়নি ভাষা সৈনিক গোলাম মাওলা সেতুর কাজ

৭ বছরেও শেষ হয়নি ভাষা সৈনিক গোলাম মাওলা সেতুর কাজ

গ্লোবাল টিভি ছবি

শরীয়তপুর প্রতিনিধি: গত ৭ বছরে দুইবার ঠিকাদার পরিবর্তন করেও ভাষা সৈনিক ডাঃ গোলাম মাওলা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি এলজিইডি। এতে নদী পারাপারে দুই পাড়ের মানুষ এবং ঢাকা গামী যাত্রীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। গত ৬ মাস ধরে নদী পারাপারের একমাত্র মাধ্যম খেয়া নৌকা বা ট্রলার, যেখানে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে।

স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা আতঙ্ক নিয়ে নদী পার হচ্ছে। যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা না করে পুরোনো সেতু ভেঙে ফেলায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের দাবি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আর জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব অবহেলার কারণে সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর সঙ্গে শরীয়তপুরের নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার সড়ক পথে যোগাযোগ সহজ করতে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে কীর্তিনাশা নদীর ওপরে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ২০১৫ সালে ওই সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে চাইলে হেঁটে যাতায়াতের সুযোগ ছিল। পরে নতুন ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলে গত সাত মাস আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পুরোনো ব্রিজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন থেকেই সবাইকে খেয়া পারাপারের ওপর ভরসা করতে হয়। 

শরীয়তপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানিয়েছে, ১৯৯৭ সালে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কীর্তিনাশা নদীর উপরে ১০৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ করেন এলজিডি। ২০১০ সাল হতে নদী ভাঙনের কারণে সেতুটি ধীরে ধীরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে সেতুটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেলে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা দেয় এলজিইডি। বন্ধ করে দেয়া হয় ভারী যান চলাচল। নতুন সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৫ মিটার সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্যোগ এবং নাভানা কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেন এলজিইডি। কিছুদিন কাজ করার পর নাভানা কনস্ট্রাকশন ২০১৯ সালে কাজ শেষ না করেই করে চলে যায়।

এরপর ২০২১ সালে পুনরায় দরপত্র হয়। ১০৫ মিটার সেতুর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে করা হয় ২২২ মিটার। এ কাজের জন্য কার্যাদেশ পায় কোহিনূর এন্টারপ্রাইজ। না না অজুহাতে কাজের টাল বাহানা করে ৫০ ভাগ কাজ শেষ করতেই গত ৯ জুন কাজের মেয়াদ শেষ হয়। তবে ৫০ ভাগ কাজের জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই তুলে নিয়েছে ৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, সেতুর কারণে নড়িয়া উপজেলার অন্তত ১০টি হাটবাজার ক্ষতির মুখে পড়েছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন বন্দর থেকে পণ্য আনা-নেওয়ায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। এখন ব্যবসায়ীদের দীর্ঘ পথ ঘুরে পণ্য পরিবহন করতে হচ্ছে। এতে অর্থ ও সময় দুটোই ব্যয় হচ্ছে। 

স্থানীয়রা জানান, ভাষা সৈনিক গোলাম মাওলা সেতুর দৈর্ঘ্য ৩০০ মিটার। যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৯ কোটি টাকা। পদ্মা সেতুর আগে এই সেতুর কাজ শুরু হয়। তবে গোলাম মাওলা সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় পদ্মা সেতুর সুফল থেকেও নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাস থেমে যাচ্ছে সেতুর পশ্চিমপ্রান্তে। দুই উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করতে হচ্ছে ভেঙে ভেঙে। অন্যদিকে সেতুর পশ্চিমপ্রান্তে বসবাসকারীরাও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। মুমূর্ষু রোগী নিয়ে তাদের দীর্ঘ পথ ঘুরে যেতে হয়। ভোগান্তি পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদেরও। উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ নিয়ে বিপাকে কৃষকরা। 

ঠিকারদার আব্দুল ওহাব মুঠোফোনে বলেন, শরীয়তপুরের সাংবাদিকরা ঠিকাদারের পেছনে থাকলেও প্রকল্পের মূল সমস্যাগুলোর দিকে নজর দিচ্ছে না। সেতুটির প্রাথমিক ডিজাইন সঠিক নয়, তাই পাইল করার পর নতুন ডিজাইন তৈরি করতে হবে। সয়েল টেস্টের পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। প্রকল্পটির প্রাথমিক সময়সীমা আড়াই বছর থাকলেও, সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৫০% বেড়ে গেছে। ডিজাইন পরিবর্তনের কারণে আরও ছয় মাস লাগবে, ফলে কাজ শেষ হতে চার বছরের বেশি সময় লাগবে।

এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রাফেউল ইসলাম জানান, পিলার নির্মাণে কিছুটা জটিলতা থাকলেও সাত বছরে ৫০-৫৫% কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করতে এক বছর সময় লাগবে। ২০১৭ সালে নিযুক্ত ঠিকাদার কাজ শেষ না করায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নতুন ঠিকাদারের ধীরগতির কাজের জন্য বারবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিকল্প ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের কাজ চলছে, যা আগামী দুই মাসের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মূল ব্রিজের কাজটি এই ২০২৫ সালের জুলাই মাসের আগেই সমাপ্ত হবে।