গ্লোবাল টিভি ছবি
সেলিম রানা, কালিয়াকৈর, গাজীপুর:গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার বনের জমি রক্ষার প্রয়াসে বন বিভাগের কর্মকর্তারা এক ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে পড়েছেন। অবৈধ দখলদারদের একের পর এক আক্রমণে শুধু বন বিভাগের কাজই ব্যাহত হচ্ছে না, কর্মীদের জীবনও বিপন্ন হয়ে পড়ছে।
অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে নেয়া প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপগুলো একের পর এক বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, এবং অপরাধীদের আক্রমণাত্মক মনোভাব দিনদিন বেড়েই চলেছে। অবৈধ দখলদারদের হামলার ভয়াবহতায় সরকারি জমি রক্ষায় নিয়োজিত বন বিভাগের কর্মীরা বর্তমানে এক জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। অবৈধভাবে দখল হওয়া বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে হেনস্থার শিকার হতে হয় সংবাদকর্মীদেরও। এছাড়াও ভূমিদস্যরা মুঠোফোনে বা চিরকুটের মাধ্যমে সংবাদ কর্মীদের হুমকি প্রদান করছে নিয়মিত। সংবাদকর্মীদের বসতবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে।
জানা যায়, কালিয়াকৈর উপজেলার জাথালিয়া এলাকায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে বাধা দিতে গেলে বনকর্মীরা পথিমধ্যে ভূমিদস্যুদের দ্বারা নির্মম আক্রমণের শিকার হন। দুইজন বিট কর্মকর্তা এবং তিনজন প্রহরীর উপর অতর্কিত হামলা চালায় তারা। আঘাতের কারণে তারা গুরুতর আহত হন। তাদেরকে উন্নত শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেপিজি মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার বনের জমি অবৈধভাবে দখল করার প্রবণতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বিশেষ করে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে, ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রভাবশালী গোষ্ঠী বন বিভাগের জমি দখল করে আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণে লিপ্ত হয়েছে। দিন দিন জমির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং জনসংখ্যার চাপের ফলে স্থানীয় জনগণের পৈতৃক সম্পত্তি ছোট হয়ে আসছে, যা তাদের বন বিভাগের জমির উপর নির্ভর করতে বাধ্য করছে। ফলে, এই অঞ্চলে বেআইনি স্থাপনা নির্মাণের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
অবৈধ দখলদাররা শুধু বন বিভাগের জমি দখল করে থেমে থাকছে না, তারা পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। বন উজাড় করে তারা আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তুলছে, যা স্থানীয় পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের জন্য ভয়ানক বিপদ ডেকে আনছে। এছাড়াও, অবৈধ দখলদারদের কারণে বনের মূল্যবান বৃক্ষসম্পদ ধ্বংস হচ্ছে এবং সেই সাথে বন্যপ্রাণীর বাসস্থান হুমকির মুখে পড়েছে।
কালিয়াকৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তরিকুল ইসলাম বলেন, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের উপর হওয়া হামলার বিষয়ে থানায় একাধিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। আমরা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি এবং যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
তবে, এখন পর্যন্ত কোনো স্থায়ী সমাধান পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।