ঢাকা, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ২৮ মাঘ ১৪৩১ | ১০ শা‘বান ১৪৪৬

আজ মহান বিজয় দিবস

আজ মহান বিজয় দিবস

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ মহান বিজয় দিবস। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের মধ্য দিয়ে জাতি আজ নতুন করে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করছে।

এ বছর স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর, বাংলাদেশের নবযাত্রায় জাতি নতুন উদ্যম ও উদ্দীপনা নিয়ে দিনটি পালন করবে। 

স্বৈরশাসককে ক্ষমতাচ্যুত করতে গিয়ে শত শত ছাত্র-জনতা শাহাদাত বরণ করেছে, সাত শতাধিক মানুষ চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে, অনেকে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খুইয়েছে, কমপক্ষে ২৪ হাজার মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছে, বিপুলসংখ্যক লোককে জোরপূর্বক গুমের শিকার হতে হয়েছে, অনেক আহত মানুষ এখনও হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন এবং অনেকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কালাতিপাত করছে।

পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার মুহূর্তকে স্মরণ করে বিজয় দিবস উদযাপন শুরু হয় ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে। বিজয় দিবস উপলক্ষে সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহিদ স্মৃতিস্তম্ভে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং এরপর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে স্মৃতিসৌধ পুষ্পস্তবক অর্পণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। 

সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সারাদেশে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।

আজ সরকারি ছুটির দিন।

দিবসটি উপলক্ষে বিএনপিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ পৃথক বাণী দিয়েছেন। 

বিজয় দিবসের প্রাক্কালে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান এবং মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। 

রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। তাই আসুন, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে এবং মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য বাস্তাবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখি। দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরো এগিয়ে নিয়ে যাই, গড়ে তুলি উন্নত-সমৃদ্ধ এক নতুন বাংলাদেশ- মহান বিজয় দিবসে এই আমার প্রত্যাশা।

রাষ্ট্রপতি বলেন, এ বছর জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন এ দেশের মানুষ দেখেছে, তা অচিরেই বাস্তবায়িত হবে বলে আমি মনে করি। বীরের দেশ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা লাভ করবে-ইনশাআল্লাহ।

প্রধান উপদেষ্টা তার বাণীতে বলেন, আজকের এই দিনে, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর শহিদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি এবং তাদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাই। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করছে।

তিনি বলেন, দেশকে আরও উন্নত ও শক্তিশালী করতে এবং স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল ভোগ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিজয় দিবস কেবল আমাদের গর্বের উৎস নয়, এটি আমাদের শপথের দিনও। শপথ আমাদের একতাবদ্ধ থাকার, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার।