ঢাকা, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ২৮ মাঘ ১৪৩১ | ১০ শা‘বান ১৪৪৬

অকেজো প্রকল্পে নষ্ট ফসলি জমি : ক্ষতিপূরণ পায়নি অনেকেই

অকেজো প্রকল্পে নষ্ট ফসলি জমি : ক্ষতিপূরণ পায়নি অনেকেই

গ্লোবাল টিভি ছবি

এমএ কাইয়ুম, মাদারীপুর: পদ্মা সেতু সংলগ্ন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর ও শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায় ১২০ একর জমি অধিগ্রহণ করে  ১৯শ কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ হাসিনা তাঁত পল্লী নামে একটি প্রকল্পের কাজ হাতে নেয় আওয়ামী সরকার। সম্প্রতি সরকার পতনের পর প্রকল্পের নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নেয় কর্তৃপক্ষ।  ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি অনেকেই। ৩ মওসুমের ফসলি জমি হারিয়ে  তাদের চোখে-মুখে চিন্তার ভাঁজ।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, জমিতে ফসল ফলিয়ে তাদের সংসার ভালোই চলতো। এখন সব হারিয়ে বিল পাওয়ার আশায় তারা ঘুরছে। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘শেখ হাসিনা তাঁত পল্লী’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯১১ কোটি টাকা। প্রকল্পে ৮ হাজার ৬৪ টি তাঁত শেড নির্মাণ করার পরিকল্পনা ছিল। যেখানে ৮০৬৪ জন তাঁতীকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার মাধ্যমে বছরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় প্রায় ৪ দশমিক ৩১ কোটি মিটার কাপড়। 

এছাড়া কয়েকটি ৬ তলা ভবন, প্রত্যেক তাঁতীর জন্য ৬শ ফুটের কারখানা ও ৮শ ফুটের মধ্যে আবাসন সুবিধাও ছিল এই পল্লীতে। সরকারের পক্ষ থেকে সুতা, রংসহ কাঁচামালের সুবিধা, আন্তর্জাতিক মানের শো-রুম, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, তাঁতীদের ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সও ছিল প্রকল্পের পরিকল্পনায়। প্রকল্পটি ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথে নতুন করে শত শত ঘর-বাড়িসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ ও গাছপালা রোপণ শুরু করে ক্ষতিপূরণে বাড়তি বিলের আশায়। সরকারের কোটি কোটি টাকা অবৈধ পন্থায় লুটপাটের মহোৎসব চলছিল, এমন অভিযোগও রয়েছে কিছু জমির মালিক ও এক শ্রেণীর দালালের বিরুদ্ধে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় পড়েনি আশপাশের এমন জমিতে থাকা ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা ও ক্ষতিপূরণ না দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। 

পরে  বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভায় তৎকালীনমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আজম, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা সবাই একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন যে সকল এলাকায় অবৈধভাবে ঘর-বাড়ি, গাছপালাসহ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে তারা ক্ষতিপূরনের আওতায় পড়বে না। ফলে ক্ষতিপূরণ দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় জমির প্রকৃত কিছু মালিক তাদের ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হয়। 
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার আগেই পশ্চিম দিকের সীমানা প্রাচীর হতে ৩ শ ফিটের বেশি সীমানা প্রাচীরের অংশ ভেঙে পড়ে আছে। যার মূল্যবান জিনিস নষ্ট হচ্ছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে কাজের মান খারাপ ছিল তাই ভেঙে পড়েছে। বাকি যে সরকারী সম্পত্তি আছে তা রক্ষনাবেক্ষন না করলে সরকারের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে যাবে। প্রকল্প বন্ধ হলে সরকারের শত শত কোটি টাকা গচ্চা যাবে, এমনটি বলছে সুধী মহল।

স্থানীয়রা জানায়, এলএ শাখা এবং দালালদের  কমিশন না দিয়ে বিল তুলতে পারেনি অনেকেই। প্রকল্পের মাঝ দিয়ে একটি আঞ্চলিক  সড়ক ছিল, যে সড়ক দিয়ে বহু বছর ধরে এলাকার লোকজন যাতায়াত করতো, সেটিও বন্ধ করে দেয়ায় জনদুর্ভোগ  তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি  ক্ষতি হচ্ছে  শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায়। এটি খুলে দেয়ার দাবি এলাকাবাসির।

সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি ইয়াকুব খান শিশির বলেন, যারা ক্ষতিপূরণ পায়নি, তারা সেটা পাওয়ার অধিকার রাখেন। তাদের দ্রুত বিল দিয়ে দেয়া দরকার। প্রকল্পটির কাজ বন্ধ করলে সরকারের শত শত কোটি টাকা লস হবে। সঠিক তদারকির মাধ্যমে কাজটি শুরু করলে ভাল হয়। 

মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ক্ষতিপূরণের বিল দেয়া হয়েছে কাগজপত্র যাচাই করে। যদি কেউ ক্ষতিপূরণ না পেয়ে থাকে, তাদের অবশ্যই দেয়া হবে। প্রকল্পের কাজ চলা না চলার বিষয়ে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসনের কাছে তেমন কোন তথ্য নেই। সংস্লিষ্ট মন্ত্রণলয় ও প্রকল্প পরিচালক বলতে পারবেন।