ঢাকা, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ | ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | ১৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

শিরোনাম

ইংল্যান্ডের চার্চের প্রধানের পদে প্রথমবার বসলেন কোনো নারী

ইংল্যান্ডের চার্চের প্রধানের পদে প্রথমবার বসলেন কোনো নারী

ইংল্যান্ডের চার্চের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সারা মুলালিকে। প্রথমবারের মতো কোনো নারী এ পদে বসলেন।  তবে শুক্রবার (৩ অক্টোবর) ক্যান্টারবেরির আর্চবিশপ হিসেবে তাঁর নিয়োগের ঘোষণার পরপরই সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন আফ্রিকাভিত্তিক রক্ষণশীল অ্যাংলিকান নেতারা, যাঁরা নারী বিশপ নিয়োগের বিরোধিতা করছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, মুলালি এখন থেকে বিশ্বের প্রায় ৮ কোটি ৫০ লাখ অ্যাংলিকান খ্রিষ্টানের আনুষ্ঠানিক প্রধান হবেন। পূর্বসূরিদের মতো তাঁকেও রক্ষণশীল (বিশেষ করে আফ্রিকায়, যেখানে কিছু দেশে সমকামিতা বেআইনি) এবং পশ্চিমে তুলনামূলকভাবে উদার খ্রিষ্টানদের মধ্যে বিদ্যমান বিভেদ দূর করার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।

ক্যান্টারবেরি ক্যাথেড্রালে প্রথম ভাষণে ৬৩ বছর বয়সী এই সাবেক নার্স চার্চকে কলঙ্কিত করা যৌন নির্যাতনের কেলেঙ্কারি ও নিরাপত্তাজনিত ব্যর্থতার নিন্দা জানান। পাশাপাশি গতকাল যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার শহরে ইহুদিদের উপাসনালয় সিনাগগের সামনে হামলায় দুজন ইহুদি নিহত হওয়ার ঘটনায় ইহুদিবিদ্বেষের সমালোচনা করেন তিনি।

এদিকে আন্তর্জাতিক রক্ষণশীল অ্যাংলিকান গোষ্ঠী গাফকন তাৎক্ষণিকভাবে মুলালির নিয়োগের সমালোচনা করে বলেছেন, এটি প্রমাণ করে ইংল্যান্ডের চার্চ ‘নেতৃত্ব দেওয়ার কর্তৃত্ব হারিয়েছে’। যাঁরা তাঁর নিয়োগে আপত্তি জানাতে পারেন, তাঁদের উদ্দেশে মুলালি বলেন, ‘আমি এমন একজন যাজক হতে চাইব, যিনি আমাদের ঐতিহ্য যেমনই হোক না কেন, প্রত্যেকের ধর্মীয় কাজ এবং পেশাকে বিকশিত হতে সাহায্য করবেন।’

এর আগে, এক প্রতিবেদনের পর ওয়েলবি পদত্যাগ করেন। যেখানে দেখা যায় চার্চ অব ইংল্যান্ড ১৯৭০-এর দশকের একাধিক নির্যাতনের ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছিল।  আরও বলা হয়, ২০১৩ সালে বিষয়টি জানার পরও ওয়েলবি জানাতে ব্যর্থ হন কর্তৃপক্ষকে। স্বতন্ত্র তদন্তে জানা যায়, আইনজীবী জন স্মাইথ ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে ইভানজেলিকাল সামার ক্যাম্প আয়োজন করতেন এবং সেখানে প্রায় ১৩০ জন কিশোর ও তরুণকে নির্যাতন করেছিলেন। ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ৭৫ বছর বয়সে স্মাইথ মারা যান, যখন তিনি ব্রিটিশ পুলিশের তদন্তাধীন ছিলেন। কোনোদিনই তিনি ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হননি।  এই কেলেঙ্কারি যুক্তরাজ্যে ব্যাপক আলোড়ন তোলে ও চার্চ অব ইংল্যান্ডে সংস্কারের দাবিকে জোরালো করে। এই চার্চের সর্বোচ্চ প্রধান হলেন ব্রিটিশ সম্রাট। চার্চ অব ইংল্যান্ডের প্রায় দুই কোটি বাপ্তাইজড সদস্য রয়েছে, যদিও ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী নিয়মিত গির্জায় যাতায়াতকারীর সংখ্যা এক মিলিয়নেরও কম। দীর্ঘ নির্বাচনী প্রক্রিয়া শেষে রাজা তৃতীয় চার্লস মুল্যালিকে নিয়োগ দেন, যেখানে অংশ নেন ব্রিটিশ গোপন নিরাপত্তা সংস্থা এমআই৫-এর সাবেক প্রধানও। অ্যাংলিকান চার্চ ১৫৩০-এর দশকে রাজা অষ্টম হেনরির রোমান ক্যাথলিক চার্চ থেকে বিচ্ছেদের পর থেকে রাষ্ট্রীয় চার্চ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য, ৬৩ বছর বয়সী মুলালি একসময় নার্স ছিলেন। ২০০০ এর দশকের শুরুর দিকে তিনি ইংল্যান্ডের প্রধান নার্সিং কর্মকর্তার দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি চার্চগুলোতে একটি উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ সংস্কৃতি তৈরি করার পক্ষে কাজ করছেন, যেখানে ভিন্নমত ও মতবিরোধের স্থান থাকবে। রাজা চার্লসের আনুষ্ঠানিক সম্মতি নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কার্যালয় শুক্রবার চার্চ অব ইংল্যান্ডের নতুন নেতা মুলালির নাম ঘোষণা করেন। রাজা হিসাবে চার্লসই ছিলেন চার্চ অব ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ গভর্নর; ষোড়শ শতকে ক্যাথলিক চার্চ থেকে আলাদা হওয়ার পর রাজা অষ্টম হেনরি এই পদ সৃষ্টি করেছিলেন।