ভারত-পাকিস্তানের রাজধানীতে ২ দিনে ২ বিস্ফোরণ দক্ষিণ এশিয়ায় ফের অস্থিরতা শুরুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দিল্লির ব্যস্ত এলাকায় ফরেনসিক দল যখন এক বিস্ফোরিত গাড়ির ধ্বংসাবশেষের তল্লাশি চালাচ্ছিল, ঠিক সেই সময় ইসলামাবাদে আদালত ভবনের বাইরে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটে। একদিনের ব্যবধানে হওয়া দুটি বিস্ফোরণে দুই ডজনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এ দুই ঘটনার মধ্যে এখন পর্যন্ত সরাসরি কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।
তবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের জন্য এই ঘটনাগুলো ফের মনে করিয়ে দিচ্ছে—এই অঞ্চলে এখনো নিরাপত্তাজনিত উত্তেজনা দানা বেঁধে রয়েছে। রাজধানীর মতো কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত শহরে এ ধরনের বিস্ফোরণ খুবই বিরল। কিন্তু দুইদিনে দুই প্রাণঘাতী বিস্ফোরণে ভারত, পাকিস্তানের পাশাপাশি আফগানিস্তানের কর্মকর্তারাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
মঙ্গলবার ইসলামাবাদে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে অন্তত ১২ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। তার আগের দিন, দিল্লির ঐতিহাসিক লাল কেল্লার কাছে একটি গাড়ি বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ জন নিহত ও এক ডজনের বেশি মানুষ আহত হন। দুই প্রতিবেশী দেশ, যাদের বৈরীভাব সম্প্রতি যুদ্ধ পর্যন্ত গড়াতে দেখা গেছে। পরপর, দুই দেশের রাজধানীতেই ঘটেছে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ। আর তাতেই রহস্যের গন্ধ খুঁজে পাচ্ছেন বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা। সম্প্রতি ভারতের নয়াদিল্লি ও পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বোমা হামলার পর থেকেই আবারও পাল্টাপাল্টি দোষারোপে মেতেছে দুই দেশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রমাণ ছাড়াই দুই দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপের খেলায় মেতে উঠেছে। তবে এ ধরনের হামলা চলতে থাকলে এর পেছনে যাদেরই হাত থাকুক না কেন, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে তা নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।
দোষারোপের পালা শুরু হয়েছে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই অভিযোগ করেন, ইসলামাবাদে আত্মঘাতী হামলার পেছনে রয়েছে ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসী চক্র, যারা আফগান মাটি ব্যবহার করছে। এর জবাবে নয়াদিল্লি জানায়, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মনোযোগ সরানোর মরিয়া প্রচেষ্টা। দিল্লির বিস্ফোরণ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তিনি একে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করেন, তবে এটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে উল্লেখ করেননি। যদিও ভারত এই ঘটনায় পাকিস্তানের নাম নেয়নি, তবে অতীতে এমন পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লি প্রায়ই ইসলামাবাদকে দায়ী করেছে। ফলে, এই সপ্তাহের দুই হামলা অঞ্চলজুড়ে নতুন অস্থিরতার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
পাকিস্তান বরাবরই অভিযোগ করে আসছে, ভারত আফগানিস্তানের ভেতর থেকে পাকিস্তানবিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা করে। অন্যদিকে ভারত দাবি করে, পাকিস্তানই সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয় যারা ভারতে হামলা চালায়। দুই দেশই একে অপরের অভিযোগ অস্বীকার করে। এই অভিযোগ-প্রত্যাঘাতের ইতিহাস নতুন নয়। কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার পর গত মে মাসে দুই দেশের মধ্যে যে সংঘাত শুরু হয়েছিল, তাতে যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার পর্যন্ত গড়ায়। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘ভারতের মাটিতে কোনো হামলা মানেই যুদ্ধ ঘোষণা।’ তারপর ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায়, আর পাকিস্তান পাল্টা সামরিক অভিযান চালায়।
টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি অধ্যাপক ফাহাদ হুমায়ুন বলেন, এখন ভারত কিছুটা সংযম দেখালেও, যদি দিল্লি বিস্ফোরণকে আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসী হামলা বলে ঘোষণা দেয়, তাহলে জনমনে প্রতিশোধের দাবি বেড়ে যাবে। এখন দিল্লি ও ইসলামাবাদ—দুই শহরের মানুষই তাদের প্রিয়জন হারানোর শোক সামলে ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। যে শহরগুলো এতদিন এসব ঘটনার বাইরে ছিল, সেখানে হামলা ঘটার মানে হলো—এই বিপদ এখন আর প্রান্তিক এলাকার সমস্যা নয়, বরং ছড়িয়ে পড়ছে বড় শহরগুলোতেও।