গ্লোবাল টিভি ছবি
আজ ২২ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানের উভয় অংশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পরিবেশ সৃষ্টির কথা বলে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে বৈঠক করে নিজের বাসভবনে ফিরে শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন চলছে। লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
দুপুরে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে কড়া সামরিক পাহারায় হোটেলে ফিরে ভুট্টো তার উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। হোটেলের বাইরে ভুট্টো-বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষুব্ধরা।
সন্ধ্যায় ভুট্টোর নেতৃত্বে পিপলস পার্টির নেতারা প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। রাতে সেখান থেকে ফিরে হোটেল লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুট্টো।
সেখানে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট এবং আওয়ামী লীগ প্রধান বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে একটি সাধারণ ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। তবে ওই ঐকমত্য অবশ্যই পিপলস পার্টির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। পিপলস পার্টির অনুমোদন ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত পশ্চিম পাকিস্তানিরা মেনে নিতে পারে না।’
ঢাকার কয়েকটি পত্রিকা ‘বাংলার স্বাধিকার’ শিরোনামে একটি ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। সেখানে বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত একটি বাণীও ছিল।
ওই ক্রোড়পত্রে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী, অধ্যাপক রেহমান সোবহান প্রবন্ধ লেখেন। অবজারভার গ্রুপের পত্রিকাগুলো সেদিন ওই ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেনি। তারা পরদিন ছাপে।
এদিন বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকেরা সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ করেন। তারা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে অভূতপূর্ব ঐক্য গড়ে উঠেছে, তাতে আমরা আর প্রাক্তন হিসেবে বসে থাকতে পারব না।’
সারাদিন জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে মিছিলের ঢল ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যায়। এক দিনে এত মিছিল এর আগে কখনও ৩২ নম্বরে যায়নি।
বাসভবনে জনতার উদ্দেশে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘সাত কোটি বাঙালি যখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তখন আমি অবশ্যই দাবি আদায় করে ছাড়ব। ২৩ বছর মার খেয়েছি, আর মার খেতে রাজি নই। শহিদদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজন হলে আরও রক্ত দেব। কিন্তু এবার সুদে-আসলে বাংলার দাবি আদায় করে আনব।’