ঢাকা, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৭ পৌষ ১৪৩২ | ১০ রজব ১৪৪৭

শিরোনাম

ফের এক হলেন আবু ত্বহা আদনান ও সাবিকুন নাহার

ফের এক হলেন আবু ত্বহা আদনান ও সাবিকুন নাহার

অবশেষে ফের এক সাথে হলেন ইসলামিক বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান ও তার প্রাক্তন স্ত্রী সাবিকুন নাহার। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সাবিকুন নাহার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্ট করে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের মাঝে চিরস্থায়ী ৩ তালাক বায়েন হয়নি, স্ত্রী কর্তৃক খুলা তালাক হয়েছিল। যেখানে উভয়ের সম্মতিতে যে কোন সময় নতুন বিবাহের মাধ্যমে সংসার শুরু করার সুযোগ থাকে!সেটাই হয়েছে। ওয়ামা আ'লাইনা ইল্লাল বা'লাগ।

ফেসবুকে পোস্টে সাবিকুন নাহার লিখেন, আলহামদুলিল্লাহ! Sabiqun Nahar Sarah got married with Abu Taw Haa Muhammad Adnan। দুনিয়াটা ক্ষনস্থায়ী। পুরোদস্তুর ধোঁকা, নিখাঁদ এক প্রতারণা।  কতদিনই আর বাঁচব আমরা এই দুনিয়ায়? অনন্ত পরকালের চুলছেড়া হিসেব আর চিরস্থায়ী জান্নাতের সাফল্যই যে সব!  সেই সাফল্যের ভিখারী হয়েই আজ কথাগুলো লিখছি....... কে কি ভাববে? কে কি বলবে?  কি হবে আর কি নাহবে এসবেরও বিন্দুমাত্র পরোয়া নেই......

প্রতিনিয়ত আয়িশা তার বাবাকে খোঁজে! বাবা যাবো! বাবা গাড়ি! বাবা কই? শব্দগুলোর ওজন উঠানোর কোনো পরিমাপক মহাবিশ্বে নেই।  উসমানও মাকে পাচ্ছেনা। উসমানের সামনে অন্যরা তাদের মায়ের নিকট আম্মু বলে ছুটে যাচ্ছে। অন্যদিকে নির্লিপ্ত চাহনিতে উসমানের প্রশ্ন তার আম্মুর কাছে কখন নিয়ে যাবে! 

যা ঘটে গেছে তার অনিবার্য পরিণতি যে এটাই তা হয়তো আমরা জানতাম, তবে জানা আর প্রতিনিয়ত উপলব্ধি করা যে কখনোই এক নয়! ইলমুল ইয়াক্বিন আর হাক্কুল ইয়াক্বিনে আছে আকাশসম ফারাক। জানা বিষয়টি উপলব্ধি করেছি আমরা। বেশাক আমাদের ভুল ছিলো। কিছু ভুল বুঝেছি, বুঝানোও হয়েছে! উসমানের বাবার প্রতি প্রগাঢ় মুহাব্বাত থেকেই অস্থির হয়েছি, কিছু রাগ, জেদ ও সীমালঙ্ঘনও হয়ে গেছে! সাথে মানুষ ও জ্বীন শয়তান, বিচ্ছেদের যাদু কি না ছিল? 

হয়তো এভাবেই আমাদের ভাগ্য লিখা হয়েছিলো। তাকদিরের কাছে তো অনেক বড়রাও অসহায় ছিলেন, যেমন গ্রহণের সময় নিরুপায় থাকে চাঁদের আলো। তাই বলে কি চাঁদ কস্মিনকালেও কলংকিত? সে যে আজন্ম আমার চাঁদ-ই ছিলো! দুরাচার শয়তান সঠিক সময়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে বারংবার!  শুভ্র, সচ্ছ, সুন্দরে, চিন্তায় ইবলিসকে তাই ঠাঁই দেইনি আর। ফা লিল্লাহিল হামদ! 

অতঃপর... আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন। আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন।  আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন।  উসমান ও আয়িশা তাদের বাবা মাকে ফিরে পেয়েছে! আল্লাহুম্মা লাকাল হামদ। আমি আমার মোহাব্বত, আমার আত্মা,  সংসার আর চাদরটাকে ফিরে পেয়েছি!  সকলের সামনে বরাবরই বলে গিয়েছি আমার হৃদয়ের স্পন্দন তুমি। "তোমাকেই ভালোবাসি" Taw Haa Zin Nurain।  জানি তোমাকে প্রচন্ড কষ্ট দিয়ে ফেলেছি! 

ভুল বুঝেছি! তুমি গায়রতে সম্মানে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছো! যা উদ্দেশ্য ছিলোনা তা হয়ে গেছে! যা বোঝাতে চাইনি তাই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে! অজস্র আঘাত আর ক্ষত নিয়ে মুখ বুজে নীরবেই চলে গেছ! প্রতিউত্তর টুকুও করোনি! তোমার অনন্য সবরের প্রতিদানে আরশের রব তোমার দো-জাহানের সমস্ত হাজত মাকসাদ পূরণ করে দিন।আজ আমি তোমাকে ফিরে পেয়ে কত খুশি তা বলার আমার কোনো ভাষা নেই!  শুধু এটুকুই দু'আ যে, এতকিছুর পরেও আমাকে তুমি যেভাবে খুশি করেছো আল-ওয়াদুদ শতগুণ উত্তমরূপে তোমাকে তার দিদার দিয়ে রোজ হাশরে খুশি করে দিন! 

তোমার রিসেন্ট লেকচারটা শুনেছি। হ্যাঁ, আমি তোমার জন্য যায়েদ (রাঃ) হতে পারিনি। তবে আমি জীবন দিয়ে রবের সন্তুষ্টির তরে, দ্বীনের পথে তোমার জন্য নিজেকে প্রমাণ করবই ইনশাআল্লাহ! আর কিছুই বলার নেই।  আল্লাহ চান তো অচিরেই প্রতিটি অযাচিত বিষয় পুরো দুনিয়ার সামনে দীপ্তমান হবে ইনশাআল্লাহ! ألَيْسَ الصُّبْحُ بِقَرِيْب আজ শুধুই- "আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন।  তিনিই সেই রব যিনি মৃত থেকে জীবিত করেন। তিনিই সেই রব যিনি ধ্বংস থেকেও নতুন করে সৃষ্টি করেন। তিনিই সেই রব যিনি অসম্মানের সূরতেও সম্মানিত করেন। তিনিই সেই রব যিনি পরাজয়ের ভেতর থেকেও জয় বের করে আনেন।  তিনিই সেই রব যিনি হতাশ হওয়ার পরও রহমত দ্বারা সিক্ত করে দেন।  সবার কাছেই আমরা দু'আর মুহতাজ! 


প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২১ অক্টোবর ইসলামিক বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান ও তার প্রাক্তন স্ত্রী সাবিকুন নাহারকে ঘিরে কয়েকদিন ধরে চলা পারিবারিক বিতর্ক এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তৈরি উত্তাপের অবসান ঘটেছে।  নিজেদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিষয়টির সমাধান হওয়ার কথা জানিয়েছেন আবু ত্বহা ও সাবিকুন নাহার উভয়ই। স্ট্যাটাসে আবু ত্বহা লিখেছেন, ‘উস্তাদ আবু ত্বহা মুহাম্মাদ আদনান ও তার প্রাক্তন স্ত্রী সাবিকুন নাহারের পারিবারিক বিষয়গুলো দেশের বরেণ্য মুরুব্বি ওলামায়ে কেরামদের মাশওয়ারার ভিত্তিতে শারিয়া মোতাবেক সুন্দরভাবে সমাধান ও নিষ্পত্তি করা হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।’

সমাধানের সর্বশেষ আপডেট জানিয়ে আদনান লিখেছেন—
১.‘মুরুব্বি ওলামায়ে কেরামের উপস্থিতিতে মুহতারাম আবু ত্বহা আদনান তার প্রাক্তন স্ত্রীকে খুলা তালাকের প্রস্তাবনা দিলে তিনি তা গ্রহণ করেন। এমতাবস্থায় তাদের মধ্যে বর্তমান কোনো বৈবাহিক সম্পর্ক অবশিষ্ট নেই।’ ২. ‘বিয়ের সম্পূর্ণ মোহরানা পূর্বেই পরিশোধ করা ছিল। এ বিষয়ে কোনোরকম আলোচনা ও দেনা-পাওনা বাকি নেই আলহামদুলিল্লাহ।’ ৩. ‘তিনি (সাবিকুন নাহার) মিরপুর ঢাকাস্থ Taw Haa Zin Nurain Islamic Center এর উন্নয়ন প্রকল্পে গত বছর প্রায় ৫ ভরি এবং অন্যান্য কিছু খাতে (তার ভাষ্যমতে) আরো প্রায় তিন ভরি স্বর্ণ ও নগদ অর্থ প্রতিষ্ঠানকে ফেরতযোগ্য ধার হিসেবে প্রদান করেছিলেন, যা বিগত মাজলিসে তিনি তার প্রাক্তন স্বামী আবু ত্বহা আদনান সাহেবের কাছে দাবি করেন।’

‘ওলামায়ে মাজলিস এগুলো পরিশোধের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এবং উভয় পক্ষই বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। এই অর্থ তার শারঈ হক্ব তাই প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা পরিশোধে সচেষ্ট আছে। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৮ ভরি স্বর্ণের বিনিময়ে বিবাহ বিচ্ছেদের যে গুজব রটানো হয়েছে তা সত্য নয়।’ ‘উস্তাদ আবু ত্বহা আদনান ও তার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে উক্ত গুজব প্রচারণার কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই। অনুগ্রহ করে আপনারা কেউ কোনো প্রকার গুজবে প্রভাবিত হবেন না এবং কারো প্রতি কোনো মিথ্যা অভিযোগ বা অপবাদ আরোপ করবেন না।’

৪. ‘বাচ্চাদের বিষয়ে মুরব্বিদের মাজলিসে শরিয়াহ সম্মতভাবে ফয়সালা প্রদান করা হয়েছে, উভয় পক্ষই মাজলিসের উক্ত ফয়সালা সর্বসম্মতিক্রমে মেনে নিয়েছেন।’ ‘বিষয়টি ওয়ালামের মাজলিসের পরামর্শক্রমে পারিবারিকভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে। তাই এই বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন করে আলোচনা-সমালোচনা না করার জন্য আমরা সবার নিকট বিনীত অনুরোধ করছি।’

অন্যদিকে, সাবিকুন নাহার তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন। সম্প্রতি আমার পারিবারিক যে ইস্যুটি সর্বসাধারণের সামনে এসেছে; ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে তার অত্যন্ত সুন্দর ও উত্তম মীমাংসা হয়েছে। দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের উদ্দেশ্যে পারিবারিক জটিল পরিস্থিতি থেকে সহজ, সরল ও সুন্দর প্রতিকারের আশায় আমাকে চূড়ান্ত এক ভীতিপ্রদ দীর্ঘ লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই সংশ্লিষ্ট ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের নজর আকর্ষণ করে অতঃপর এ সমাধান পেতে হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় পাবলিক প্ল্যাটফর্মে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়, আবেগে, অনিশ্চয়তায়, আমার দ্বারা যত গুনাহ হয়েছে তা থেকে আমি রবের দরবারে প্রকাশ্যে তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি। নিশ্চয়ই তিনি রহমান, তওবা কবুলকারী এবং ক্ষমাকারী। ইনশাআল্লাহ আমি নিজেও পরবর্তী সময় এ বিষয়ে কোনো প্রকার কথা বলা থেকে বিরত থাকব এবং সরাসরি এ ইস্যুটিকেই মেনশন করে যারা আলোচনা, সমালোচনায় লিপ্ত এমন সর্বস্তরের আলোচক ও সমালোচকদেরও বিরত থাকার অনুরোধ করছি।

সবশেষ নিজের প্রতিটি অডিও ও ভিডিও ক্লিপ ডিলিট করার আহ্বান জানিয়ে মিডিয়ার উদ্দেশে তিনি লেখেন, আর আল্লাহর ওয়াস্তে পরকালের স্বার্থেই পারিবারিক আলোচনাসংবলিত আমার প্রতিটি অডিও, ভিডিও ক্লিপ ডিলিট করার জন্য সব মিডিয়ার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। এ কঠিন সময়ে যারা পাশে ছিলেন, আছেন, ভালোবেসেছেন তাদের প্রত্যেককে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা উত্তম প্রতিদান দান করুন এবং যারা ঘৃণাভরে তিরস্কার/নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন মালিক তাদের ক্ষমা করুন।