ছবি : সংগৃহীত
বিশ্ব বাঁশ দিবস আজ (১৮ই সেপ্টেম্বর)। ঘাস পরিবারের বৃহত্তম এই সদস্য শুধু প্রকৃতিরই অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়, বরং মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বৈশ্বিকভাবে বাঁশ শিল্পের উন্নয়ন ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৫ সালে বিশ্ব বাঁশ সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৯ সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত অষ্টম বিশ্ব বাঁশ কংগ্রেসে সংস্থার তৎকালীন সভাপতি কামেশ সালামের প্রস্তাবে ১০০টি দেশের প্রতিনিধিরা সর্বম্মতিক্রমে ১৮ই সেপ্টেম্বরকে বিশ্ব বাঁশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই থেকে প্রতি বছর এই দিনে বাঁশের বহুবিধ ব্যবহার, পরিবেশবান্ধব বৈশিষ্ট্য এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে দিবসটি উদযাপন হয়ে আসছে।
বাঁশকে সবুজ সোনা হিসেবেও অভিহিত করা হয়। এটি দ্রুত বর্ধনশীল একটি উদ্ভিদ যা পরিবেশ থেকে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং তুলনামূলকভাবে বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করে। এর ব্যাপক ও গভীর শিকড় মাটির ক্ষয়রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থনৈতিকভাবে, বাঁশ একটি অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। নির্মাণসামগ্রী, আসবাবপত্র, কাগজ, বস্ত্রশিল্প থেকে শুরু করে বাদ্যযন্ত্র ও নানান হস্তশিল্প তৈরিতে বাঁশের ব্যবহার অপরিসীম। এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে বাঁশ একটি মজবুত ভিত্তি প্রদান করে।
বাংলাদেশেও ঘরবাড়ি তৈরি, চাটাই, ঝুড়ি, আসবাবসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা পণ্য তৈরিতে যুগ যুগ ধরে বাঁশের ব্যবহার চলে আসছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যমতে, বাঁশের প্রজাতি বৈচিত্র্যের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। বাংলাদেশে প্রায় ৩৩ প্রজাতির বাঁশ পাওয়া যায়। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ বাঁশ শিল্প ও চাষের সঙ্গে জড়িত থেকে জীবিকা নির্বাহ করেন। সঠিক পরিকল্পনা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং উদ্ভাবনী ডিজাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বাঁশ শিল্প শুধু দেশের চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারে। এতে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে, তেমনি পরিবেশ সুরক্ষাতেও এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
পরিবেশবিদরা অবশ্য বাঁশকে নিয়ে একেবারে সিরিয়াস। কারণ এটি কার্বন শোষণ করে বাতাসকে পরিচ্ছন্ন রাখে, আর মাটিকে আঁকড়ে ধরে ভূমিক্ষয় ঠেকায়। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে বাঁশ কেবল গ্রামীণ জীবনের বন্ধু নয়, বরং পৃথিবী বাঁচানোর এক সৈনিক। তবে সত্যি বলতে, আমাদের জীবনে বাঁশের স্থান এতটাই মজবুত যে আলাদা করে দিবস পালনের দরকার আছে কিনা—তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। গ্রামের কারও সঙ্গে আড্ডা দিলেই শোনা যাবে, জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি কাজে বাঁশ কেমনভাবে মিশে আছে। তবুও, ১৮ সেপ্টেম্বর একটু মজা করে বলা যায়— আজ বাঁশের দিন, তাই বাঁশের কদর করুন। কারণ বাঁশ শুধু কাঠামো নয়, আমাদের সংস্কৃতির অংশ, হাস্যরসেরও অংশ।