রাজধানীর উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ১১৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দগ্ধ সাইবা জাহান সাইমা (১০) ও সাইরা জাহান (১০) নামে দুই শিক্ষার্থী। তারা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। বুধবার (১২ নভেম্বর) সকালে তাদের জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দীন। তিনি জানান, ২১ জুলাই একটি মর্মান্তিক বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অনেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে তারাও দগ্ধ হয়। প্রায় চার মাস তারা দুইজন আমাদের এখানে চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্যে সাইমার শরীরের ১০ শতাংশ এবং সাইরা জাহানের ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। বর্তমানে আরও ৩ জন আমাদের এখানে ভর্তি আছে।
উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই দুপুরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দিয়াবাড়িতে অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে একটি ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে। দুর্ঘটনার ফলে মুহূর্তেই আগুন ধরে যায় এবং ভবনটির একটি অংশে ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং বিমানের পাইলটসহ বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ৩১ থেকে ৩৬ জন নিহত হন (যাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু শিক্ষার্থী) এবং আহত হন বহু। সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিহত পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন, যাতে প্রাণহানি কম হয়। ওই ঘটনায় একদিনের জাতীয় শোকও ঘোষণা করে সরকার।
গত বুধবার (৫ নভেম্বর) ষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন বিমান বিধ্বস্তে ৩৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপ্যাল স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল এস এম কামরুল হাসান। সেই তদন্ত প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়েছে। পরে বিকালে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির মিলনায়তনে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এসব জানান। প্রেস সচিব বলেন, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রশিক্ষণ চলাকালে পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটি ও নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটে। কমিটি প্রায় ১৫০ জন প্রত্যক্ষদর্শী, ভুক্তভোগী ও বিশেষজ্ঞের সাক্ষ্য নিয়ে ১৬৮টি তথ্য উদ্ঘাটন করেছে এবং ৩৩টি সুপারিশ করেছে। কমিটির প্রধান সুপারিশ হলো— ভবিষ্যতে বিমান বাহিনীর ইনিশিয়াল ট্রেনিং রাজধানীর বাইরে সরিয়ে নেওয়া, যাতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এমন দুর্ঘটনা পুনরায় না ঘটে।