ফাইল ছবি
মোহাম্মাদ রাফিউল হক: করোনার ভয়াল থাবা যখন আমাদের দেশেও হানা দিয়েছিল, তখন সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও অনেকেই অনলাইন শপিংয়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠে। করোনার জন্যে যখন মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারতো না, দোকানপাট সব যখন বন্ধ, চাকরি, ব্যবসা হারিয়ে অনেকেরই দিশেহারা অবস্থা, তখনি ঘর হতে আমাদের মা বোনেরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, সংসারের হাল ধরার জন্যে এগিয়ে এসেছিলেন। তারা অনলাইনে খাবারের অর্ডার নিয়ে ঘরে ঘরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতেন। যদিও তার অনেক আগে থেকেই অনেকেই হোমমেড ফুড নিয়ে কাজ করতেন, কিন্তু করোনার সময় থেকেই হোমমেড ফুডের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা সবার কাছে, সব জায়গায় বৃদ্ধি পায়।
যার সুফল আমরা এখন দেখতে পারছি। বিভিন্ন কর্পোরেট ইভেন্টে, অফিসের লাঞ্চে, ঘরোয়া অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে জন্মদিন, গায়ে হলুদ, বিয়ে বৌভাত বা বিভিন্ন রোগীদের জন্যে হাসপাতাল গুলোতে পর্যন্ত খাবার দিয়ে থাকেন আমাদের হোমমেড ফুডের উদ্যোক্তারা। হোমমেড ফুডের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, আপনি খাবারগুলো নিজের মতো করে কাস্টমাইজ করে নিয়ে পারবেন। ঝাল কম অথবা বেশি, তেল মসলা, বা রোগীদের জন্যে রান্না সব কিছুই করা সম্ভব। সোজা কোথায়, নিজের রান্না ঘরে আপনি যেভাবে রান্না করবেন, তেমনি করেই অন্য কেউ তাদের রান্না ঘরে আপনার রান্নাটা করে দিচ্ছেন আপনার বা আপনার প্রিয়জনের জন্যে। আরেকটা সুবিধা হলো, ভেজালমুক্ত খাবার। যেহেতু হোম মেড ফুডের উদ্যোক্তারা তাদের নিজেদের রান্না ঘরেই রান্না করে থাকেন , তাই তারা বাণিজ্যিকভাবে রান্না করেন না। ঠিক যতটুকু খাবারের অর্ডার তারা পান, ঠিক ততটুকুই তারা রান্না করে থাকেন।
যদি অসুবিধার কথা বলতে হয় তবে বলতে হবে দামের কথা। পাড়ার দোকান,খাবারের হোটেল বা রেস্তোরেন্ট থেকে অধিক দাম। একই জিনিসের একেকজনের কাছে ভিন্ন রকম। এছাড়া অনেকেই নতুন হোম মেড ফুডের উদ্যোক্তা হিসেবে এসেছেন যাদের অভিজ্ঞতা কম ,তাই তাদের রান্নার মান বা কোয়ালিটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া কঠিন।
যেহেতু হোম মেড ফুড উদ্যোক্তারা বাণিজ্যিকভাবে রান্না করেন না, তাই স্বাভাবিক ভাবেই সাধারণ হোটেল বা রেস্তোরা থেকে তাদের রান্না করা খাবারের দাম বেশি হবে। আবার একই খাবারের দাম একেকজনের কাছে ভিন্ন ভিন্ন, কারণ দেশের বাজারগুলোতেও একই পণ্যের দাম ভিন্ন ভিন্ন।
হোম মেড ফুডের উদ্যোক্তাদের নিয়ে সম্প্রতি একটি ফেসবুক খোলা হয়েছে যা শুধু তাদের জন্যেই। যেখানে দেশের বিভিন্ন হোমমেড ফুডের উদ্যোক্তারা আছেন , সাথে আছেন বিভিন্ন খাবার নিয়ে কাজ করা উদ্যোক্তারা। এই গ্ৰুপে রান্না করা খাবারের উদ্যোক্তাদের সাথে সাথে পাবেন দেশের বিভিন্ন জায়গার প্রসিদ্ধ মিষ্টি নিয়ে কাজ করা উদ্যোক্তা, পিঠা, গুড়, চিনি, হাতে বানানো রুটি থেকে সরিষার তেল, ঘরে বানানো বাটার, ঘি, পাবনার ঘি থেকে শুরু করে সব রকমের খাবারের উদ্যোক্তাদের।
ফেসবুকে অনেক ছোট বড় গ্ৰুপ আছে যারা সব উদ্দোক্তাদের নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু ঘরের খাবারের উদ্যোক্তাদের নিয়ে এই গ্ৰুপ ইতিমধ্যেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ফেসবুক ভিত্তিক সেই গ্ৰুপটির নাম হচ্ছে হোম মেড ফুড এন্টারপ্রেনার্স অফ বাংলাদেশ (Homemade Food Entrepreneurs of Bangladesh) , আপনারা চাইলে ঘুরে দেখতে পারেন। আশা করি , তারা বাংলাদেশের সব হোমমেড ফুড উদ্যোক্তাদের এক কাতারে নিয়ে তাদের উন্নয়নে কাজ করবেন।
-সিডনি, অস্ট্রেলিয়া থেকে।