 
																		রাজনৈতিক বিবাদমান পক্ষগুলোকে আবারো অহমিকা এবং তর্ক-বিতর্ক পরিহার করে ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’ কার্যকরে একমত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে নির্বাচন অনিশ্চিত এবং ড. ইউনুসকে পদত্যাগ করতে হতে পারে। এছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি ভয়ানক রকম জটিল হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর বিজয় নগরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন আশঙ্কার কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, আনোয়ার সাদাত টুটুল, ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি, এবিএম খালিদ হাসান, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক সেলিম খান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ প্রসঙ্গে দলের অবস্থান তুলে ধরে মঞ্জু বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে গতকাল মঙ্গলবার সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সুপারিশে অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাহী আদেশ জারির পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন পর্যন্ত যে কোনো দিন গণভোট আয়োজনের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া সংসদের প্রথম ৯ মাসে (২৭০ দিন) সংবিধান সংস্কার পরিষদ সংস্কার সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে তিনভাগে বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। ১. প্রথমে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি। ২. দ্বিতীয়ত, আদেশের প্রশ্নে গণভোট আয়োজন। ৩. আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকার (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) ক্ষমতা দিয়ে প্রস্তাবগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
মঞ্জু বলেন, যেসব বিষয় সংবিধান সংশ্লিষ্ট নয়, তা সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারে এবং সুপারিশের অনেক বিষয় আছে, যা অফিস আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এসব বিষয়ে দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের কোনো মতভিন্নতাও নেই। প্রথম দুই ভাগের বিষয়গুলো দ্রুত বাস্তবায়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শেষ ভাগের প্রস্তাবগুলোর জন্য দুটো বিকল্প রাখা হয়েছে এবং গণভোটে জনগণের বৈধতা নেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন।
এবি পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, সংবিধান সংশ্লিষ্ট ৪৮টি বিষয়ের ব্যাপারে দুটি বিকল্প প্রস্তাব সুপারিশ করা হয়েছে। প্রস্তাব দুটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সনদে থাকা সংবিধান সংশোধনের বিষয়গুলো কার্যকর করতে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ জারি করবে। আদেশ এবং এর তফসিলে উল্লিখিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবগুলো গণভোটে দেওয়া হবে। পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত ক্ষমতাপ্রাপ্ত একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে, যা সংবিধান সংস্কারের ক্ষেত্রে গঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। জাতীয় সংসদ নিয়মিত কাজের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে। বিকল্প দুই প্রস্তাবের একটিতে বলা হয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদে সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া বিল গণভোটে দেবে। গণভোটে অনুমোদন পাওয়া সংবিধান সংস্কার বিল পরিষদের সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হবে এবং পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে। অন্য প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন করবে এবং সংস্কার কার্যক্রম শেষ হলে পরিষদের কার্যক্রম সমাপ্ত হবে।
গণভোটের দিনক্ষণ ঠিক করা সরকারের ওপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে সুপারিশে বলা হয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারির পর থেকে জাতীয় নির্বাচনের দিন পর্যন্ত যেকোনো দিন গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে। আমরা আশাকরি সরকার চূড়ান্তভাবে যখন গণভোট আয়োজন করবে তাতে রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নেবে। আমরা মনে করি গণভোটে হ্যা সূচক ভোটদানের মাধ্যমে এদেশের নাগরিকগণ জুলাই জাতীয় সনদের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের অভিপ্রায়েরই বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে। সেক্ষেত্রে, নোট অব ডিসেন্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বিলুপ্ত হওয়া উচিত। তবে আমরা আশা করবো যেসব রাজনৈতিক দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, গণভোটের আগেই জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে তারা সেগুলোকে কাটছাঁট করে হলেও সমঝোতার মাধ্যমে প্রত্যাহার করে নেবেন।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব বিষয়ে তিনি জানান, জুলাই জাতীয় সনদ একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির অনন্য দলিল। এটি বাস্তবায়নে যে সময়সীমা (২৭০ দিন) বেঁধে দেওয়া হয়েছে তা যথেষ্ট। সুদীর্ঘ আলোচনার মধ্য দিয়েই তো সংস্কার প্রস্তাবনাগুলো চুড়ান্ত করা হয়েছে। পরবর্তী পার্লামেন্টে এগুলো নিয়ে নতুন করে বিস্তর আলোচনার খুব বেশি প্রয়োজন হবে না। এগুলো সংবিধানে সন্নিবেশিত করবার জন্য ৭০ দিনও লাগবার কথা নয়। আলোচনা ও যুক্তিতর্ক আমরা যথেষ্ট করেছি। বিবাদমান পক্ষগুলোকে আবারও ইগো এবং তর্ক-বিতর্ক পরিহার করে ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’ কার্যকরে একমত হওয়া আবশ্যক। ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে নির্বাচন আয়োজনে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে এবং ড. ইউনুসকে পদত্যাগ করে চলে যেতে হতে পারে। তখন পরিস্থিতি ভয়ানক জটিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।