ঢাকা, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৭ পৌষ ১৪৩২ | ১০ রজব ১৪৪৭

শিরোনাম

নির্বাচনে ভুয়া তথ্যঝুঁকি নিয়ে ডিজিটালি রাইটের গবেষণায় সতর্কবার্তা

নির্বাচনে ভুয়া তথ্যঝুঁকি নিয়ে ডিজিটালি রাইটের গবেষণায় সতর্কবার্তা

আসন্ন ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভুয়া তথ্য ও বিদ্বেষমূলক প্রচারণা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা, সামাজিক স্থিতি এবং নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের জন্য অভূতপূর্ব ঝুঁকি তৈরি করছে বলে সতর্ক করেছেন গবেষকরা। বাংলাদেশের ডিজিটাল অধিকার ও তথ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ডিজিটালি রাইট’-এর নতুন এক গবেষণায় এমন সতর্কবার্তা উঠে এসেছে। 

বোরবার (২ নভেম্বর) ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ‘ট্যাকলিং ইলেকশন ডিসইনফরমেশন ইন বাংলাদেশ: বিল্ডিং কালেকটিভ রেসপন্সেস ফর ইলেক্টোরাল ইন্টেগ্রিটি’ শিরোনামে এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে ডিজিটালি রাইট। গবেষণাটি বাস্তবায়িত হয়েছে যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের অর্থায়নে ‘প্রমোটিং ইফেকটিভ, রেসপনসিভ অ্যান্ড ইনক্লুসিভ গভর্ন্যান্স ইন বাংলাদেশ’ কর্মসূচির আওতায়। অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের মূল ফলাফল উপস্থাপনের পর অনুষ্ঠিত আলোচনায়, অংশগ্রহণকারীরা নির্বাচনী অপতথ্য ঠেকাতে গণমাধ্যম, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বিভিন্ন প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশের অনলাইন তথ্যপরিবেশ এখন ভীষণভাবে ভঙ্গুর ও বিভক্ত হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় গোষ্ঠী, বিদেশী ও প্রবাসী প্রভাবিস্তারকারী, সবাই যেন এক ধরনের ‘ডিজিটাল প্রতিযোগিতায়’ নেমেছে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইনির্ভর কনটেন্ট, প্রোপাগান্ডা নেটওয়ার্ক এবং বাণিজ্যিক কনটেন্ট নির্মাতাদের মাধ্যমে জনমত প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন ডিজিটাল পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ায় প্রায় নেই বললেই চলে। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম কোম্পানি অন্য অংশীজনদের সঙ্গে সমন্বয় করছে না। নির্বাচন কমিশনেরও এই ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত নীতি-কাঠামো, দক্ষতা ও সক্ষমতা নেই। ঝুঁকি ও সক্ষমতার ব্যবধান এখন বিপজ্জনকভাবে বিস্তৃত।

গবেষণা বলছে, ভুয়া তথ্য কেবল রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার হাতিয়ার নয়, বরং এটি এখন জনআস্থা কমিয়ে আনা, সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও নারীর কণ্ঠরোধের অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। বিকৃত ছবি, মনগড়া ভিডিও ও এআই ব্যবহার করে তৈরি কনটেন্ট নারী প্রার্থী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা নির্বাচনের আগে ভয়ভীতি, হয়রানি ও ভোটার দমন বাড়িয়ে তুলতে পারে। তবে, এ ঝুঁকির বিপরীতে প্রস্তুতি এখনও আশঙ্কাজনকভাবে দুর্বল। ১৭ কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশে প্রাতিষ্ঠানিক ফ্যাক্টচেকারের সংখ্যা কেবল ৪০ থেকে ৫০ জন। বেশিরভাগ মূলধারার গণমাধ্যমে ফ্যাক্টচেকার নেই। সাংবাদিক ও ফ্যাক্ট-চেকাররা প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত টুল ও পারস্পরিক সমন্বয়ের অভাবে ভুগছেন।

মূল ফলাফল তুলে ধরে ডিজিটালি রাইটের গবেষণা প্রধান তিতির আব্দুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বেশ কিছু বিধিমালা তৈরি হচ্ছে, যেগুলোতে বিভিন্ন সংজ্ঞা স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই বা এর অপব্যবহার রোধের জন্য কোনো সুরক্ষাব্যবস্থাও রাখা হয়নি। এ থেকে বোঝা যায়, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে যথেষ্ট আলোচনা হয়নি, যা বিভিন্ন আইনের যথেচ্ছ প্রয়োগের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। এ ধরনের বিধিমালা ব্যবহার করে বৈধ সমালোচনা ও ভিন্নমতকে দমন করা হচ্ছে, যেমনটা আমরা অতীতে বিভিন্ন আইনের ক্ষেত্রেও দেখেছি। মানবাধিকারের ওপর এর প্রভাব যাচাই করতে ও সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সুরক্ষার ব্যবস্থা করার জন্য, যেকোনো বিধিমালা গ্রহণের আগে অংশীজনদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলোচনা করা উচিত।