আগামী ১৬ ডিসেম্বরই দেশে হ্যান্ডসেট নিবন্ধন বা ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) সিস্টেম সিস্টেম চালু হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ‘বৈধ ও নিরাপদ হ্যান্ডসেট ব্যবহারে এনইআইআর’র গুরুত্ব’ শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য জানান বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আমিনুল হক।
তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে অবাধে মোবাইল ফোন ক্লোন করা হচ্ছে। বিটিআরসির ডাটাবেইজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মাত্র ৫টি আইএমইআই নম্বরের বিপরীতে বাজারে পাওয়া গেছে প্রায় ৫০ লাখ হ্যান্ডসেট। ১৬ ডিসেম্বর থেকে হ্যান্ডসেট নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হবে। ব্যবসায়ীদের কাছে থাকা অবৈধ হ্যান্ডসেটগুলো যাচাই-বাছাই করে ক্লোন ও রিফারবিশ ফোন বাদে বাকি সেটগুলো সরকার চাইলে রাজস্ব প্রাপ্তির মাধ্যমে বৈধ করে নেয়ার সুযোগ দেবে।
উল্লেখ্য, কোনো বৈধ মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর নকল করে তৈরি সেটগুলোকে ক্লোন ফোন বলা হয়। আর রিফারবিশ ফোন হলো বিদেশে ব্যবহৃত পুরোনো হ্যান্ডসেট, যেগুলো দেশে এনে নতুন বলে বিক্রি করা হয়।
বর্তমানে ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বৈধ কি না যাচাই করবেন যেভাবে
ধাপ-১: প্রথমে মোবাইলের কিপ্যাডে *#06# ডায়াল করুন। স্ক্রিনে দেখা যাবে ফোনের আইএমইআই নম্বর।
ধাপ-২: মোবাইল ফোন থেকে *১৬১৬১# নম্বরে ডায়াল করুন।
ধাপ-৩: অটোমেটিক বক্স এলে হ্যান্ডসেট-এর ১৫ ডিজিটের আইএমইআই (IMEI) নম্বরটি লিখে প্রেরণ করুন।
ধাপ-৪: ফিরতি মেসেজের মাধ্যমে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের/হ্যান্ডসেটের হালনাগাদ অবস্থা জানানো হবে।
বিটিআরসির ওয়েবসাইটে ‘Verify IMEI’ অপশনে গিয়ে আইএমইআই (IMEI) নম্বরটি লিখুন। সঙ্গে সঙ্গে ফলাফল দেখা যাবে–আপনার ফোনটি ‘Valid’, ‘Invalid’ নাকি ‘Clone’।
বিদেশ থেকে ব্যক্তিপর্যায়ে কেনা বা উপহার পাওয়া একটি মুঠোফোন প্রাথমিকভাবে দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে সচল হবে। তবে পরবর্তীতে এই ফোনগুলোকে অবশ্যই নিবন্ধন করে নিতে হবে। প্রাথমিকভাবে সচল হওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে অনলাইনে প্রয়োজনীয় তথ্য দাখিলের জন্য গ্রাহককে এসএমএসের মাধ্যমে নির্দেশনা দেয়া হবে। এরপর গ্রাহকের দাখিল করা সব তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর শুধু বৈধ ফোনগুলোই নেটওয়ার্কে সচল থাকবে।
ধাপ-১: গ্রাহককে প্রথমেই এনইআইআর পোর্টালে (neir.btrc.gov.bd) যেতে হবে এবং প্রয়োজনীয় তথ্যাদি দিয়ে নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার করতে হবে।
ধাপ-২: পোর্টালের স্পেশাল রেজিস্ট্রেশন (Special Registration) সেকশনে গিয়ে মুঠোফোনের আইএমইআই নম্বর দিতে হবে।
ধাপ-৩: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের ছবি বা স্ক্যান কপি যেমন- পাসপোর্টের ভিসা/ইমিগ্রেশন, ফোনটি ক্রয়ের রশিদ ইত্যাদি আপলোড করে সাবমিট বাটনে চাপ দিতে (প্রেস করতে) হবে।
ধাপ-৪: হ্যান্ডসেটটি বৈধ হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হবে। তবে বৈধ না হলে গ্রাহককে এসএমএসের মাধ্যমে তা জানিয়ে দেয়া হবে এবং ফোনটিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে।
উল্লেখ্য, ব্যক্তিপর্যায়ে বিদেশ থেকে ফোন নিয়ে আসার ক্ষেত্রে, বাংলাদেশে বিদ্যমান ব্যাগেজ রুলস (আমদানি বিধিমালা) অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে দেশের নেটওয়ার্কে আগে ব্যবহৃত নিজের ব্যক্তিগত একটি ফোন বাদে সর্বোচ্চ আর একটি মুঠোফোন বিনা শুল্কে দেশে আনতে পারবেন। আর শুল্ক দেয়া সাপেক্ষে আরও একটি অতিরিক্ত ফোন নিয়ে আসতে পারবেন।
নিবন্ধিত মুঠোফোন গ্রাহক যদি বিক্রি বা হস্তান্তর করতে চাস সেক্ষেত্রে আগে হ্যান্ডসেটটিকে ‘ডি-রেজিস্ট্রেশন’ করতে হবে। ডি-রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে অবশ্যই গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে নিবন্ধিত একটি সিম ফোনে থাকতে হবে এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের শেষ চার ডিজিট উল্লেখ করতে হবে। নিবন্ধিত ফোন বিক্রি বা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে। ডি-রেজিস্ট্রেশন করা যাবে চারটি মাধ্যমে।
১. সিটিজেন পোর্টাল (neir.btrc.gov.bd)
২. মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর (এমএনও) পোর্টাল
৩. মোবাইল অ্যাপস
৪. ইউএসএসডি চ্যানেল (*১৬১৬১#)
তবে ডি-রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে গ্রাহক তার ফোনে যে সিমটি ব্যবহার করছেন তা অবশ্যই নিজের এনআইডি দিয়ে নিবন্ধিত হতে হবে। ক্লোন বা ডুপ্লিকেট আইএমইআই নম্বর যুক্ত হ্যান্ডসেট ডি-রেজিস্ট্রেশন করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তথ্য হিসেবে পরবর্তী ব্যবহারকারীর সিম নম্বর দিতে হবে।