ঢাকা, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৭ পৌষ ১৪৩২ | ১০ রজব ১৪৪৭

শিরোনাম

গবেষণা

৩০ মিনিটের বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার শিশুদের মনোযোগের ক্ষমতা কমায়

৩০ মিনিটের বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার শিশুদের মনোযোগের ক্ষমতা কমায়

শিশু-কিশোরদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিয়ে বাড়ছে সচেতনতা। অস্ট্রেলিয়া ইতিমধ্যে আইন তৈরি করেছে যে ১৬ বছরের কম বয়সী কারও ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাটের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট রাখা যাবে না। এরপর আরও অনেক দেশ এই সিদ্ধান্তের দিকে এগোচ্ছে। এদিকে এক গবেষণায় উঠে এসেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দৈনিক ৩০ মিনিটের বেশি সময় করলে শিশুদের মনোযোগ ধরে রাখার সক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে পারে।

সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির গবেষকরা আট হাজারের বেশি শিশুর ওপর পরীক্ষা চালিয়ে এক গবেষণায় এ তথ্য জানিয়েছে। এ গবেষণায় স্ক্রিন ব্যবহারের অভ্যাস এবং অ্যাটেনশন-ডেফিসিট/হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার-এডিএইচডি সম্পর্কিত উপসর্গের সম্ভাব্য সংযোগ খতিয়ে দেখেছেন তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী মোট ৮ হাজার ৩২৪ শিশুকে চার বছর ধরে অনুসরণ করেন গবেষকরা। এ সময় শিশুদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার, টিভি বা ভিডিও দেখা এবং ভিডিও গেম খেলার গড় সময় বিবেচনায় নেওয়া হয়। দেখা যায়, একটি শিশু যেখানে ৯ বছর বয়সে দৈনিক প্রায় ৩০ মিনিট স্ক্রিনে চোখ রাখত, সে ১৩ বছর বয়সে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর্যন্ত স্ক্রিনে সময় ব্যয় করছে।

গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, যে শিশুরা ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, টিকটক, ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার) বা মেসেঞ্জারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশি সময় ব্যয় করেছে, তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে অমনোযোগিতার উপসর্গ তৈরি হয়েছে। অনেক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ন্যূনতম বয়সসীমা ১৩ বছর নির্ধারিত থাকা সত্ত্বেও ৯ বছর বয়সে শিশুদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের দৈনিক গড় সময় ছিল প্রায় ৩০ মিনিট, যা ১৩ বছর বয়সে গিয়ে দাঁড়ায় আড়াই ঘণ্টায়। পিয়ার-রিভিউড জার্নাল পেডিয়াট্রিক্স ওপেন সায়েন্স–এ প্রকাশিত এই গবেষণায় টিভি দেখা বা ভিডিও গেম খেলার ক্ষেত্রে এমন ফলাফল উল্লেখ করা হয়নি।

ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের নিউরোসায়েন্স বিভাগের কগনিটিভ নিউরোসায়েন্সের অধ্যাপক টরকেল ক্লিংবার্গ বলেন, আমাদের গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে নির্দিষ্টভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমই শিশুদের মনোযোগ ধরে রাখার সক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্তা ও নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ক্রমাগত মনোযোগ বিঘ্নিত হয়। এমনকি কোনো বার্তা এসেছে কি না, এই চিন্তাও মনোযোগ সরিয়ে দেয়। এটি মনোসংযোগ ধরে রাখার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।

পরিবারের আর্থসামাজিক পটভূমি বা এডিএইচডির প্রতি জিনগত প্রবণতা কোনোটিই এই সম্পর্ককে প্রভাবিত করেনি। এছাড়া, যেসব শিশুর আগে থেকেই অমনোযোগিতার উপসর্গ ছিল, তারা বেশি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করা শুরু করেনি। এটি ইঙ্গিত দেয় যে সম্পর্কটি ব্যবহার থেকে উপসর্গের দিকে যায়, উপসর্গ থেকে ব্যবহারের দিকে নয়। গবেষণায় হাইপার অ্যাকটিভ বা আবেগপ্রবণ আচরণ বৃদ্ধির কোনো প্রমাণও পাওয়া যায়নি। ব্যক্তিগত পর্যায়ে এর প্রভাব সামান্য হলেও জনসংখ্যার বিস্তৃত পরিসরে এর প্রভাব লক্ষণীয় হতে পারে বলে মনে করেন গবেষকরা।