চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম ১৯ দিনে দেশে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে ২০০ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ২৪ হাজার ৪৯৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে)। এর মধ্যে গতকাল বুধবার (১৯ নভেম্বর) এক হাজার ২৬৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এদিকে চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত প্রবাসী আয় এসেছে এক হাজার ২১৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত একই সময়ে প্রবাসী আয় এসেছিল এক হাজার ৪৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান। তিনি বলেন, গত বছরের নভেম্বরের প্রথম ১৯ দিনে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৫৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এই সময়ের ব্যবধানে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৩০ দশমিক ৭০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের নভেম্বর মাসে প্রবাসীরা মোট ২২০ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছিলেন। চলতি মাসের এ পর্যন্ত দৈনিক গড়ে ১০ কোটি ৫৭ লাখ ডলার করে দেশে এসেছে। এ হারে রেমিট্যান্স আসলে চলতি মাসে রেমিট্যান্স দাঁড়াবে ৩১৭ কোটি ডলার। এখন পর্যন্ত কোনো এক মাসে সর্বোচ্চ ৩৩০ কোটি ডলার এসেছিল গত বছরের মার্চে। এছাড়া আর কখনো ৩০০ কোটি ডলার ছাড়ায়নি। গত অক্টোবর মাসে প্রবাসীরা ২৫৬ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন। আগের অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় যা প্রায় ১৭ কোটি ডলার বেশি ছিলো। গত অর্থবছর রেকর্ড তিন হাজার ৩৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে অর্থ পাচারে কড়াকড়ি করছে সরকার। এতে করে হুন্ডি প্রবণতা কমে প্রবাসী আয়ের বড় অংশই এখন আসছে ব্যাংকিং চ্যানেলে। রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবাহের পাশাপাশি রপ্তানি আয়েও প্রবৃদ্ধি আছে। আবার বিদেশি ঋণ বেড়ে গত জুন শেষে ১১ হাজার ২১৬ কোটি ডলার হয়েছে। সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ বেড়ে ডলারের দর ১২২ থেকে ১২৩ টাকার মধ্যে স্থিতিশীল আছে। সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে আসার অন্যতম কারণ বিবেচনা করা হচ্ছে ডলারের দরে স্থিতিশীলতা এবং আমদানিতে ডলার পেতে সংকট না থাকা। গত অক্টোবর পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমেছে। সাড়ে তিন বছরের মধ্যে যা সর্বনিম্ন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বেড়ে গত ১৬ নভেম্বর ৩১ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। বিপিএম৬ অনুযায়ী যা ২৬ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে আকুর দায় পরিশোধের আগে গত ৩০ অক্টোবর বিপিএম৬ অনুযায়ী ২৭ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিলো। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ উঠেছিলো ৩২ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলারে। বর্তমানের এ রিজার্ভ গত ৩১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে গতবছরের জুলাই শেষে বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ উঠেছিলো ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার, যা ছিলো এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।