আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শুধু ডিগ্রি অর্জন যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন সক্ষমতা, শৃঙ্খলা ও বিশ্বাসযোগ্যতা দরকার। দক্ষতাকে লক্ষ্য নয়, অভ্যাসে পরিণত করতে হবে; সততাকে নীতি নয়, পরিচয় বানাতে হবে এবং দেশপ্রেমকে আবেগ নয়, আচরণে রূপ দিতে হবে।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) পূর্বাচল নতুন শহরে অবস্থিত স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এসইউবি) সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এবারের সমাবর্তন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির স্মরণে উৎসর্গ করা হয়। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন খান। এছাড়া বক্তব্য দেন স্টেট ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ডা. এ এম শামীম, ভাইস-প্রেসিডেন্ট ডা. মো. মাহবুবুর রহমান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নওজিয়া ইয়াসমীনসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ।
আইন উপদেষ্টা বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে ব্যক্তি পর্যায়ে অনেক অর্জন থাকলেও টেকসই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। পুলিশ, বিচার ও প্রশাসনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এক সময় অগ্রসরমান অবস্থায় থাকলেও গত দেড় দশকে তাদের ভিত দুর্বল করা হয়েছে। ফলে সেগুলো কার্যকরভাবে পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ইউরোপের অগ্রযাত্রা প্রমাণ করে যে দেশ গঠনে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান কতটা গুরুত্বপূর্ণ। যেসব দেশ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পেরেছে, তারাই এগিয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের দেশে ব্যক্তি ও পরিবার প্রাধান্য পেয়েছে, প্রতিষ্ঠান নয়। ফলে অর্জন থাকলেও তা টেকসই হয়নি।
বক্তব্যের শুরুতেই ওসমান হাদির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি কখনো এত বড় জানাজা দেখিনি। মানুষের যে আহাজারি ও দোয়া প্রত্যক্ষ করেছি, তাতে আমার দৃঢ় বিশ্বাস- আল্লাহ তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত করবেন। আমি বিশ্বাস করি, হাদি এই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে আরও উত্তম এক স্থানে অবস্থান করছেন। হাদির জন্য এত মানুষের শোকের কারণ হলো- তিনি (হাদি) কখনো নিজের কথা ভাবতেন না; ভাবতেন ইনসাফ প্রতিষ্ঠার কথা। তিনি সৎ জীবনযাপন করতেন, সবাইকে ভালোবাসতেন। কর্মীদের জন্য তিনি যা করে গেছেন, তা অনেক নেতার জন্যই অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
সমাবর্তনে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি বিভাগের মোট ৬৭২ জনকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে তিনজন শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর’স গোল্ড মেডেল, চারজন শিক্ষার্থীকে ভাইস-চ্যান্সেলর সিলভার মেডেল এবং ২০ জন শিক্ষার্থীকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অ্যালামনাই, রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যরা, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ বর্তমানে দেশের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে ছয়টি সমাবর্তনে ১৫ হাজারের বেশি গ্র্যাজুয়েট স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এর আগে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ সালে। সমাবর্তন উপলক্ষে ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ, যেখানে গাউন ও হ্যাট পরিহিত গ্র্যাজুয়েটদের আনন্দ ও স্মৃতিচারণে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে পুরো প্রাঙ্গণ।