গ্লোবাল টিভি ছবি
এমএ কাইয়ুম, মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদে বাঁধাহীনভাবে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের মহা উৎসব চলছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেন নীরব, সেই প্রশ্ন স্থানীয় জনগণের।
স্থানীয় জনগণের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ওই এলাকার একটি শক্তিশালী বালু ব্যবসায়ী চক্রের মাধ্যমে দীর্ঘদিন যাবত ওই অবৈধ কার্যক্রমটি পরিচালিত হয়ে আসছে। যা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে পৌর এলাকার কিছু অসাধু ব্যবসায়িদের মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে চড়া মূল্যে কিনতে বাধ্য করা হয়।
একাধিক ভুক্তভোগী জানান, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করার ফলে কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি ভাঙনের কবলে পরছে কৃষি জমিগুলো । একাধিকবার নৌ-পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগীরা। পরে ইউএনও এর নিকট অভিযোগ জানালে তিনি একটি অভিযান পরিচালনা করে একাধিক ড্রেজার বিনষ্ট করেন। অভিযানের পরে এতটকু পরিবর্তন হয়েছে যে, আগে রাত-দিন কাজ করলেও এখন তা রাতে চলমান থাকে। সন্ধ্যার পরপরই তাদের কার্যক্রম শুরু হয়। এতে শিশুসহ অসুস্থ রোগীদের নিয়ে বিড়ম্বনার মধ্যে আমাদের পড়তে হচ্ছে। একসাথে কমপক্ষে ৬/৮ টি ড্রেজারসহ ৩০/৪০ টি বাল্কহেডের ইঞ্জিনের বিকট শব্দে কোনো রাতেই ঠিকমতো কেউই ঘুমাতে পারছে না। আর শিক্ষার্থীদের অবস্থা তো বেশ খারাপ। ওই শব্দের কারণে আশপাশের বাড়ির শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ড্রেজার ব্যবসায়ি বলেন, দিনের বেলায় স্থানীয় লোকজনের সমস্যার কারণে রাতে বালু উত্তোলন করা হয়। নৌ-পুলিশসহ স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করেই কাজ করতে হয়। প্রতিদিন একটা ড্রেজার প্রতি ৩-৫ হাজার টাকা করে প্রশাসনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে দিতে হয়। আবার প্রতিটি বাল্কহেড প্রতিবার লোড করে চলে যাওয়ার সময় পাঁচশত টাকা করে নৌ-পুলিশের জন্য রেখে দিতে হয়। এভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে খরচ দিয়ে গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছাতে অনেক খরচ পড়ে। এভাবেই আমরা ব্যবসা করে আসছি। প্রতিদিনের যার যার নির্ধারিত খরচ পাঠাতে না পারলে, ব্যবসা বন্ধ করে দেয়।
কলাতলা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নাসির উদ্দীন মিয়া বলেন, কিছুদিন হয় আমি এখানে যোগদান করেছি। তাদের ওপর স্থানীয় জনগণের বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বেশ দম্ভ করে বলেন, আপনাদের কাছে তথ্য যা আছে সব লিখে দেন, দেখা যাক কী হয়। আর কোনো কথা না বলে নামাজের কথা বলে রুম থেকে বের হয়ে যান।
শিবচর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল মালেক মিয়ার সাথে কথা বলতে চাইলে অনরেকর্ড কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত কিছু দিন আগে ওই নদীতে অভিযান পরিচালনা করে কয়েকটি লোড এবং আপলোড ড্রেজার বিনষ্ট করা হয়েছিল। সেই কারণে আমাদের উপর এখনো চাপ রয়েছে। ওই কারণে এখান থেকে বদলি হয়ে যেতে হচ্ছে।